‘বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়কারী’ উপদেষ্টা ও রাজনীতিবিদের জেলাপ্রীতি কেন?
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া; কিন্তু উপদেষ্টা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন, দেখাচ্ছেন জেলাপ্রীতি। তার সঙ্গে যুক্ত আছেন মন্ত্রিপরিষদের সচিবও।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার জেলা কুমিল্লার সড়ক ও অন্যান্য গ্রামীণ অবকাঠামো মেরামত ও উন্নয়নে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এ প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে আসিফ মাহমুদের নিজ উপজেলা মুরাদনগরে (৪৫৩ কোটি টাকা)।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্জল) হাসনাত আবদুল্লাহর উপজেলা দেবীদ্বারে (৩৩৮ কোটি টাকা)। জাান যায়, একই পথে হাঁটছেন মন্ত্রিপরিষদের সচিব শেখ আবদুর রশীদও। তার জেলা সাতক্ষীরায় এলজিইডি নিচ্ছে ২ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এ প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেই ভূমিকা রেখেছেন শেখ আবদুর রশীদ। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, কোনো জেলার জন্য এককভাবে এত বড় প্রকল্প এলজিইডি অতীতে নেয়নি।
কোটাবিরোধী আন্দোলন এক সময় রূপ নিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে, যার ফলে শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হয়েছিল এই আন্দোলনে, যার ফলে গত বছর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ঘটে; কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে আন্দোলনের মূল সমন্বয়কারীরা নিজেরাই নানা বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। তাদের অনেকে সরকারের উচ্চপদে আসীন হয়েছেন। অনেকে রাজনৈতিক দলে যুক্ত হয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। এর ফলে সমন্বয়কারী নিজেদের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে অনেক ভুল বোঝাবুঝি।
তরুণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে যখন গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হলো, বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে তখন দেশের সাধারণ মানুষ অনেক আশান্বিত হয়েছিল, যে, যাই হোক, এবার বোধহয় দেশে সুদিন আসবে। বৈষম্য ঘুঁচবে। বিগত বছরগুলোতে দেশে সমস্ত জায়গাতেই বৈষম্য বড় প্রবল হয়ে দেখা দিচ্ছিল। সে সরকারি-বেসরকারি হোক আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই হোক- দেশের সমস্ত প্রশাসনিক-প্রাতিষ্ঠানিক-অর্থনৈতিক বিভাগেই বৈষম্য চেপে বসেছিল সিন্দাবাদের ভূতের মতো। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের নেপথ্য কারণ ছিল সমাজের নানা স্তর থেকে এই বৈষম্য কমানো; কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে হীতে-বিপরীত হচ্ছে।
যাদের কাছে আমরা আশা করেছিলাম তারা সময়োপযোগী ভূমিকা রাখবেন, সমাজ-রাষ্ট্রের সর্বস্তর থেকে বৈষম্য কমানোর জন্য প্রাণপণ লড়বেন, রাষ্ট্রের বড় বড় দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেখা গেল তারাও আগের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মতোই আচরণ করছেন। এতে দেশের মানুষ যারপরনাই হতাশ হয়েছে। সেই হতাশার সর্বোচ্চ নজির এবার প্রকাশিত হলো। কেন দুই সমন্বয়কারী, যাদের একজন অধিষ্ঠিত সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে, আরেরক একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা- তারা সরকারি বরাদ্দ নিজের জেলার দিকে টেনে নিলেন? এটা শুধু জেলাপ্রীতি নয়, স্বজনপ্রীতিও।
আমরা তো জানি এসব উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের অনেক ঠিকাদারও যুক্ত থাকেন- যারা এসব প্রকল্পের বড় ভাগ পেয়ে থাকেন। কীভাবে এই প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হবে তাও আমরা জানি না। সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবেন তখনো কি এই প্রকল্পগুলো কার্যকর থাকবে? আমরা মনে করি বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় এই প্রকল্পগুলো নিয়ে পুনঃর্বিবেচনার সুযোগ আছে। কেন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এলজিইডি এত বড় স্থানীয় প্রকল্প গ্রহণ করল তার যথেষ্ট স্বচ্ছতা থাকতে হবে। আমরা আশা করব বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা, যারা সরকারের ও রাজনৈতিক দলের নেতা হয়েছেন তারা এমন কোনো কাজ করবেন না যার জন্য পরবর্তীতে তাদের প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে