Views Bangladesh Logo

‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য ভাঙার কারণ জানা জরুরি

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রেম ও দ্রোহের কবি, অসাম্প্রদায়িকতার কবি। সব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি কেবল প্রেমের বাণী ছড়াতে চেয়েছেন। দূর করতে চেয়েছেন মানুষের মনের ঈর্ষা-বিদ্বেষ; কিন্তু আজ কবির প্রেমের বাণীকেও সহ্য করতে পারছে না ঈর্ষাপরায়ণ দুর্বৃত্তরা। এর কারণ তাদের হৃদয়ে প্রেমের আলোক বাণী পৌঁছায়নি। তাই তারা পারে কাজী নজরুল ইসলামের গানের বাণী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা ভাস্কর্য ভেঙে ফেলতে।

আজ ১৯ জুন, বৃহস্পতিবার, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি প্রশাসনের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়া এই ভাস্কর্যটি কবির একটি গানের নামানুসারে তৈরি করা হয়েছিল এবং এটি স্থাপন করা হয় বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ ও পুরোনো কলা অনুষদ ভবনের মাঝখানের পুকুরপাড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে চার কোটির বেশি ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পুকুরগুলোর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের অংশ হিসেবেই নির্মিত হয় ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি। তবে ৫ আগস্ট প্রশাসনিক পটপরিবর্তনের পর নতুন প্রশাসনের নির্দেশেই এটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে, ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে নির্মিত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি ছিল নান্দনিক স্থাপনাগুলোর অন্যতম। প্রশাসন চাইলে নতুনভাবে পরিকল্পনা করে এটি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে পারতো।’

জানা যায়, এই ভাস্কর্যটি যখন নির্মাণ করা হয়েছিল, তখনই এটা নিয়ে বিতর্ক ছিল। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এভাবে ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাটা শিল্পপ্রেমীরা মেনে নিতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা বলেন, ভাস্কর্যটি ভেঙে না ফেলে এটাকে আরও কীভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা যায়- এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাবা উচিত ছিল। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সাম্প্রদায়িক চিন্তা করে যদি ভাস্কর্য ভাঙা হয়ে থাকে তবে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তারা।

গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে অনেক ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেগুলো ভেঙে ছিল মৌলবাদীরা; কিন্তু এবার জানা গেল অঞ্জলি লহ মোর ভাস্কর্য ভাঙার পেছনে জড়িত স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি কেমন উপাচার্য, যিনি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন? আমরা এই ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কারণ জানতে চাই।

প্রাপ্ত তথ্যে এটা স্পষ্ট, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভাস্কর্যটি ভাঙা হয়েছে। সিদ্ধান্ত এসেছে উপাচার্যের পক্ষ থেকেই। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তার ফোন বন্ধ কেন সেটাই তো একটা বড় প্রশ্ন।

ভাস্কর্যটি ভাঙার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক অবশ্যই তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এরকম একটি অপকর্ম ছাড় দিলে কবি নজরুলের সব শিক্ষাই এদেশে ব্যর্থ হয়ে যাবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ