Views Bangladesh Logo

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৫ লাখের বেশি ফেল

দায় কার, দায়িত্ব কার?

তকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সব শিক্ষা বোর্ড থেকে একযোগে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফেল করেছেন ৫ লাখ ৮ হাজার ৭০১ জন শিক্ষার্থী। যা মোট পরীক্ষার্থীর ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে গড় পাসের হার ৫৮.৮৩ শতাংশ যা গত বছরের তুলনায় ১৮.৯৫ শতাংশ কম। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৬১ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৬২.৫৭ শতাংশ। এইচএসসিতে এবার গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফলাফল বিপর্যয় ঘটল।

আগের বছরের প্রায় দেড় লাখ জিপিএ ফাইভের বিপরীতে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। তাহলে গত দুই দশকে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে পাসের হার ও জিপিএর সংখ্যা বাড়ার যে ধারা দেখা গিয়েছিল সেখানে ছেদ পড়ল কেন? এর আগে মাধ্যমিকের ফলাফলেও এমন প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে, গ্রেস মার্কিংয়ের মাধ্যমে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ভালো ফলাফল দেখানো হতো। তাহলে এখন কি সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হচ্ছে?

এমন প্রশ্ন তুলে শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা বলছেন, অতীতে বেশি নম্বর দিয়ে ভালো ফলাফল দেখানোর চেষ্টা কিংবা এখন সঠিক মূল্যায়নের দাবি করে ফলাফল খারাপ যেটিই হোক না কেন, এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা যা শেখার কথা সেটি তারা কি শিখছে? তাই ফলাফল খারাপ বা ভালো হওয়ার পেছনে কেবল রাজনৈতিক কারণ খুঁজলেই হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া কতটা হচ্ছে, শিক্ষকরা আসলে ক্লাসে পড়ান কিনা- এগুলোও দেখা দরকার।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মাত্র সপ্তম শ্রেণির সমান। এতেই বোঝা যায় আমাদের শিক্ষার মান কোথায়? সামনে যে প্রযুক্তিনির্ভর পেশা আসছে তার জন্য আমাদের দেশের বর্তমান শিক্ষার্থীরা কতখানি তৈরি? এই যে ৫ লাখ শিক্ষার্থী ফেল করল, কল্পনা করা যায় একটা জাতির জন্য তা কতখানি জনশক্তির অপচয়! যারা পাস করেছে তাদের অর্ধেকও নানা কারণে ঝরে যাবে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম শিক্ষা কমিশন-কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে, তারপর আরও ৫টি শিক্ষা কমিশন গঠিত হওয়ার সর্বশেষ শিক্ষা কমিশন কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল ২০০৯ সালে। তারপর গত ১৬ বছরে আর কোনো শিক্ষা কমিশন কেন গঠিত হলো না, বিশেষ করে বর্তমান সরকার যেখানে রাষ্ট্রের খোলনলচে পাল্টে দেয়ার প্রতিজ্ঞায় নানারকম সংস্কার কমিশন গঠন করল তারাও কেন যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করার জন্য কেন কোনো শিক্ষা কমিশন গঠন করল না- সেটা একটা বড় প্রশ্ন।

প্রশ্ন আসে, এই বিপর্যয়ের দায় কার? দায়িত্ব কার? শিক্ষার্থীদের কাঁধে দায় চাপিয়ে দিয়ে সরকার নিস্তার পেতে পারে না। আমাদের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা এমন ভঙ্গুরদশায় পতিত হয়েছে যে, এ জাতিকে ধ্বংস করার জন্য আর কিছু দরকার নেই, এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাই যথেষ্ট। এর দায় অবশ্যই একমাত্র সরকারের কাঁধেই বর্তায়। বাংলাদেশের শিক্ষা বাজেট তুলনামূলকভাবে এখনো খুব কম। মোট জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো দেশের তুলনায় এ দেশের শিক্ষকদের বেতন কম। বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এখনো আন্দোলন করছেন। শিক্ষার বাজেট না বাড়িয়ে, শিক্ষকদের বেতন না বাড়িয়ে কোনোভাবেই শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব নয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ