পাথর তবু রক্ষা পেল, টিলার কী হবে
সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকার পাথর লুটপাট নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে ঝড় বেয়ে গেছে। সংসাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার পর প্রশাসনের টনক নড়েছে। যৌথবাহিনীর উদ্যোগে চুরি যাওয়া কিছু পাথর ইতোমধ্যে উদ্ধারও করা গেছে; কিন্তু এবার জানা গেল আরও আতঙ্কজনক খবর- পাথরের সঙ্গে লুট হয়ে গেছে শাহ আরেফিন টিলাও।
গতকাল মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, টিলার কিছু অংশ ধ্বংস করে পাথর উত্তোলনের পর কেবল হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) আস্তানাসহ একাংশ অক্ষত ছিল। স্থানটিকে কেন্দ্র করে অবশিষ্ট ছিল কিছু গাছ ও বড় আকারের কয়েক হাজার সংরক্ষিত পাথর। এক বছরে শুধু শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্তানাই নয়, পুরো টিলা ও পাশের মসজিদ-কবরস্থানের জায়গাও ধ্বংস করে পাথর উত্তোলন করেছে পাথরখেকোরা। ফলে ধর্মীয় আবেগের সঙ্গে জড়িত জায়গাটিতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই।
জানা গেছে, পাথরের সঙ্গে লুট হয়ে গেল শাহ আরেফিন টিলাও। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা ধ্বংসের পেছনে স্থানীয় ২৬ সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ চক্রে রয়েছেন বিএনপি-আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসাজশে টিলাটি বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, শাবল আর খুন্তির আঘাতে এক বছরে ১৩৬ একরের শাহ আরেফিন টিলার অবশিষ্ট অংশ এখন বিরানভূমি। এখন সেখানে টিলা বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। স্থানে স্থানে পুকুরসম গর্ত। টিলার ভেতরে একাধিক রাস্তা করা হয়েছে পাথর বহনের জন্য। পুরো টিলা এলাকায় এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে দেখলে মনে হবে কেউ বোমা ফেলেছে। সীমান্তঘেঁষা টিলাটির পাদদেশের পানি একসময় স্থানীয় সূর্যখাল হয়ে সোনাই নদীতে গিয়ে পড়ত। সেই খালটি ভরাট হয়ে গেছে পাথর উত্তোলনের বালু ও মাটিতে।
ঐতিহাসিক তথ্যমতে, বিখ্যাত দরবেশ হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) থেকে টিলার নামকরণ হয়েছে শাহ আরেফিন। তিনি কোম্পানীগঞ্জের চিকাডহর মৌজার ওই টিলায় কয়েকশ বছর আগে আস্তানা গেড়েছিলেন। সেখানে তিনি মাঝেমধ্যেই বসতেন। পরে ওই স্থানে স্থাপনা গড়ে তোলেন ভক্তরা। বড় আকারের কালো রঙের পাথর দিয়ে সেখানে সীমানা গড়ে তোলা হয়। পরে ওই আস্তানায় উরসও হতো, যেখানে সারা দেশ থেকে জড়ো হতেন শাহ আরেফিনের (রহ.) ভক্তরা।
শুধু ধর্মীয় আবেগের জায়গা হিসেবে নয়, আরেফিন টিলা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ টিলা ঘিরে বহু প্রজাতির পাখি ও পোকামাকড়ের বসতি ছিল। তার সবই এখন শেষ। এরকম চৌর্যবৃত্তি চলতে থাকলে এক সময় বাংলাদেশের কোনো প্রাকৃতিক সম্পদই হয়তো আর অক্ষুণ্ণ থাকবে না। সাদা পাথর না হয় যৌথবাহিনীর তৎপরতায় উদ্ধার করা গেছে; কিন্তু টিলাও কি আর উদ্ধার সম্ভব? এই ক্ষতি কি কোনোভাবেই পোষানো সম্ভব?
যখন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় তখন কতিপয় রাজনৈতিক দলের নেতারা এত সাহস পায় কী করে? প্রশাসন কি অন্ধ? সরকার এতটা অকার্য হলে কীভাবে বাংলাদেশ চলবে? যে করেই হোক এই অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। যথাযথ বিচারের আওতায় আনতে হবে। কোনোভাবেই এ অপরাধকে ছাড় দেয়া চলবে না। যারা মাজার ও কবরস্থানের মাটি পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে যায় তাদের কোনোভাবেই ক্ষমা করা যাবে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে