Views Bangladesh Logo

ঈদের ছুটির জ্যামচক্র থেকে দেশ মুক্তি পাবে কবে

দ উদযাপন তখনই আরাম ও আনন্দদায়ক হয়, যখন মানুষ স্বস্তিতে, নিরাপদে পৌঁছুতে পারেন প্রিয়জনের সান্নিধ্যে। কেবল সড়কের কথা বিবেচনায় অনেকের জন্যই এই আনন্দ হয়ে উঠে উদ্বেগজনক। প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে ঢাকা ত্যাগ করা মানুষ যে তীব্র যানজটে পড়েন, তা যেন এক অবধারিত দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মহাসড়কে আটকে থাকা, গরমে কষ্ট পাওয়া, নিরাপত্তাহীনতা, অনিশ্চয়তা- সব মিলিয়ে ঈদের আগের কয়েকদিন রাজধানীর বাইরে যাত্রা যেন এক নিদারুণ পরীক্ষা হয়ে ওঠে।

এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। বরং অন্য বছরের তুলনায় দুর্ভোগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেল অনেক জায়গায়। সারা দিন পার হয়ে গেলেও অনেকে গতকাল (৫ জুন) গাজীপুর মোড় পার হতে পারেননি। একই অবস্থা বিরাজ করেছে পদ্মা সেতু পারাপারে। আজ শুক্রবার (৬ জুন) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে টাঙ্গাইল শহর বাইপাস পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, পথে গাড়ি বিকল হওয়ার কারণে এ যানজট হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

যানজট নিরসনে যমুনা সেতু দিয়ে কয়েক দফায় ঢাকাগামী লেন বন্ধ রেখে উভয় লেন দিয়ে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন পার করা হয়। পুলিশ জানায়, গত বুধবার থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণের বেশি যানবাহন ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে চলাচল করছে। এ ছাড়া যমুনা সেতু থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০টি গাড়ি বিকল হয়ে যায়। এ জন্য দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ যেন জাতির এক করুণ নিয়তি হয়ে গেছে; কিন্তু এর স্থায়ী সমাধানও তো জরুরি।

গতকাল বুধবার ছিল শেষ কর্মদিবস, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা ১০ দিন ঈদের ছুটিতে সবাই যেন একযোগে কাল রাজধানী ত্যাগের উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। এখানে সরকারের যেমন কিছু ব্যর্থতা আছে, আছে নাগরিকদেরও। টানা ১০ দিন ছুটি নিয়ে অনেকেরই আপত্তি উঠেছে, এতে যে অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের চাপ পড়বে তা বলাই বাহুল্য। এত দীর্ঘ ছুটি পাওয়ার পরও সবাই কেন একযোগে বাড়ি রওয়ানা হলেন সেটাও একটা প্রশ্ন।

ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কিংবা চট্টগ্রামগামী মহাসড়কগুলো প্রতি ঈদেই পরিণত হয় দীর্ঘ যানজটের মিছিলে। বিশেষ করে গাজীপুর, এলেঙ্গা, নবীনগর, চন্দ্রা মোড়, বঙ্গবন্ধু সেতু কিংবা দৌলতদিয়া ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকেন যাত্রীরা। ছোটখাটো দুর্ঘটনা, যানবাহনের বিশৃঙ্খল চলাচল, সড়কের বেহাল দশা এবং পর্যাপ্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব এই পরিস্থিতিকে করে তোলে আরও দুর্বিষহ। এমন বিড়ম্বনা প্রতিবারই গণমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে, উচ্চপর্যায়ের আশ্বাসও শোনা যায়; কিন্তু বাস্তবে সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান দেখা যায় না!

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা থেকে যাত্রী প্রবাহও বাড়ছে, অথচ মহাসড়কগুলোর সক্ষমতা বাড়ছে না তেমনভাবে। সড়ক সংস্কার, ওভারপাস ও বিকল্প রুট তৈরি, টোল ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার, রেল ও নৌপথের সঙ্গে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন- এসব এখন সময়ের দাবি। ঈদের আনন্দ সবার জন্য স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ করতে হলে এই জ্যামচক্র থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে এখনই। শুধু ঈদের আগে দুই-এক দিন প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়িয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না। চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন।

নগরবাসীর স্বাভাবিক ছুটির যাত্রা যেন দুর্ভোগে রূপ না নেয়, সেটাই হওয়া উচিত সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। অন্যসব সরকারের মতো বর্তমান সরকারও অনেক আশ্বাসবাণী শুনিয়েছিলেন; কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার বাস্তব প্রমাণ দেখা গেল না। প্রশাসন এখন যাত্রীর চাপ ও চালকদের ওপর দোষ দিয়েই মুক্তি পেতে চায়; কিন্তু এই তীব্র জ্যামের পেছনে যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও ব্যর্থতা ছিল না অস্বীকার করা যাবে না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ