ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের উল্লম্ফন কবে বন্ধ হবে
ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে বেশি; কিন্তু ফেরত আসছে কম। আবার অনিয়ম, কেলেঙ্কারি এবং পর্ষদের সঙ্গে আঁতাত করে নেয়া অর্থ করা হচ্ছে লুটপাট। ফলে লাগামহীনভাবে বাড়ছে দুর্দশাগ্রস্ত ও খেলাপি ঋণ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এই ঋণের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। দেশের আর্থিক খাতের নাজুক অবস্থার প্রকট চিত্রই তুলে ধরেছে এ সংখ্যা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট-২০২৪ অনুযায়ী, বর্তমানে মোট বকেয়া ঋণের ৪৫ শতাংশই এখন ‘ডিস্ট্রেসড লোন’ বা অস্বাভাবিক ঋণ। এই অঙ্কটি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের সমপরিমাণ; যা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, যেসব ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে তার একটি বড় অংশ আবারও খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের শেষে মোট পুনঃতফসিল ঋণের মধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে; যা পুরো পুনঃতফসিল ঋণের ৩৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। এক বছর আগেও এ হার ছিল ১৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
আশার কথা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে দেশের ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য ঋণ কেলেঙ্কারি, প্রতারণা, ভুয়া ঋণ ও ঋণের অপব্যবহারের বিভিন্ন ঘটনা চিহ্নিত করেছে। সব ব্যাংকের ব্যাংক ও শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এই দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে যথেষ্ট পরিপক্বতা দেখাতে পারছে বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে বার বার। বিভিন্ন মহল থেকে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলা হচ্ছে যে নিয়ন্ত্রক হিসেবে সঠিক নজরদারিতে পিছিয়ে রয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা কোনো হঠাৎ ঘটনা নয়, দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ারই ফল। বাস্তবতা হলো, এই অঙ্ক আগামীতে আরও বাড়বে। ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা মামলা জটের কারণে টাকা আটকে আছে মানি লোন কোর্ট, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে। তাই ব্যাংক খাতকে স্বাভাবিক করতে হলে বড় ঋণখেলাপিদের দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়ার আওতায় এনে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
আমরা মনে করি, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং দীর্ঘদিনের অনিয়ম মিলিয়ে ব্যাংক খাত বর্তমানে চরম চাপের মুখে। অস্বাভাবিক ঋণের পরিমাণ যতদিন না নিয়ন্ত্রণে আসছে ততদিন আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ফিরবে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে