মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপে বাংলাদেশের করণীয়
কোনো দেশ যদি আমদানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্কারোপ করে তাহলে প্রথম যে প্রতিক্রিয়া হয়, তা হলো সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বর্ধিত হারে শুল্কারোপ করেছে। বাংলাদেশের পণ্য আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে হলে ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক দিতে হবে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হয়। এরসঙ্গে আরও ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক যোগ হবে। অর্থাৎ আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করার জন্য বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশি পণ্যের একক বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। এর মধ্যে দেশটি সবচেয়ে বেশি আমদানি করে তৈরি পোশাক।২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৬ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি করা হয় ৮ দশমিক ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭ দশমিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১৭ দশমিক ০৯ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ৪৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যে সামান্য কটি উন্নত দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ভারসাম্য বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সবার শীর্ষে রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ মোট ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে। একই সময়ে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করে ৮৭৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশের অনুকূলে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৬২৬ কোটি মার্কিন ডলার। বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতিবেদন মোতাবেক, ২০২৪ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে চীন সবার শীর্ষে ছিল।
দেশটি মোট ১৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের হিস্যা হচ্ছে ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ মোট ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক সামগ্রীর বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের হিস্যা হচ্ছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর তৃতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনাম একই বছর মোট ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তাদের বাজার হিস্যা হচ্ছে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ৮৬৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয় ৭৫৮ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের।
বাংলাদেশকে যদি আগামীতে তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক প্রদান করতে হয় তাহলে যেসব দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক হার তুলনামূলকভাবে কম তারা সুবিধা পাবে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশগুলো বাংলাদেশের তুলনায় কম মূল্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারবে। আর ভোক্তাগণ যদি অন্য দেশের একই মানের পণ্য তুলনামূলক কম মূল্যে ক্রয় করতে পারে তাহলে তারা বাংলাদেশি পণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কাসহ যেসব দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে তাদের কোনো একটি দেশের প্রতি মার্কিনিদের পক্ষপাত নেই।
তারা চাইবে তুলনামূলক কম মূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য পেতে। যে দেশের উৎপাদকগণ তুলনামূলক কম মূল্যে পণ্য জোগান দিতে পারবে ভোক্তারা সেই দেশের পণ্যই ক্রয় করবে। তাই যুক্তির খাতিরেই বলা যেতে পারে, তুলনামূলক কম মূল্যে পণ্য পাওয়ার জন্য মার্কিন ভোক্তারা অন্য দেশের পণ্য ক্রয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। তুলনামূলক কম দামের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। তবে একটি সুবিধা হলো, বাড়তি শুল্ক তো আর শুধু বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত হয়নি। অধিকাংশ দেশের পণ্যের ওপরই বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়েছে। যেসব দেশের ওপর কম পরিমাণে বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সেই সব দেশের পণ্য তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।
অবশ্য শুধু মূল্য কম হলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোনো দেশের পণ্য স্থান দখল করে নিতে পারবে না যদি সরবরাহকৃত পণ্যের গুণগত মান ভালো না হয়। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরে রাখতে হলে তুলনামূলক স্বল্পমূল্যে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। কারণ কিছু ভোক্তা আছেন যারা গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উচ্চ মূল্যে পেতেও দ্বিধা করবে না। তবে সাধারণভাবে যেসব দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর তুলনামূলক কম হারে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হবে তারা কিছুটা সুবিধা পাবে। কারণ এসব দেশের পক্ষে কম মূল্যে পণ্য বাজারজাতকরণ সম্ভব হবে। যেসব দেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্কারোপ করেছে সেই সব দেশ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাস করে তাহলে ট্রাম্প প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে এখানে এক ধরনের টানাপোড়েন লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের দিক থেকেও আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেও টানাপোড়েন আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চাচ্ছে চাপ দেয়ার ফলে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক হার হ্রাস করে কি না। আর বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক হার আরও হ্রাস করে কিনা তা দেখার জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেসব দেশ পণ্য রপ্তানি করে থাকে তাদের তুলনায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হার যদি কিছুটা কম থাকে তাহলে আমরা তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবো। আর যদি প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বেশি হারে আরোপ করা হয় তাহলে বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে তৈরি পোশাক। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক সামগ্রীর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ভিয়েতনাম। এর আগে ভিয়েতনামের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপের কথা বলা হয়েছিল। আর বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছিল। ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে তাদের ওপর আরোপিত প্রস্তাবিত বাড়তি শুল্ক হার ৪৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে। আর বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হার ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তুলনায় ভিয়েতনাম সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনা আমদানি পণ্যের ওপর বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যের উপস্থিতি কমে যেতে পারে। তারা বাজার হারাবে। ঠিক একই ঘটনা ঘটতে পারে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে তা বাংলাদেশের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম। বর্তমানে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ শুল্কসহ ভিয়েতনামি পণ্যকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করার জন্য মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হবে। আর বাংলাদেশের পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করার জন্য ৩৫+১৫ শতাংশ অর্থাৎ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হবে।
ভিয়েতনামের পণ্য রপ্তানিকারকরা এই তুলনামূলক কম শুল্কের সুবিধা পাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। সেই সুযোগ ভিয়েতনামের পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দখল করে নিতে পারে। আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে। ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে টপকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দখল করে নিতে পারে। কারণ দেশটি তাদের ওপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক হার অনেকটাই কমিয়ে এনেছে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের অবস্থান সুসংহত করবে। উচ্চ শুল্কের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক সামগ্রী তার বর্তমান অবস্থান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে সে ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ ছিল।
বাংলাদেশ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে আমদানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হার ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিতো এবং দেশটির সঙ্গে কার্যকর আলোচনা চালাতে পারতো তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক হার হয়তো এতটা বেশি হতো না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পক্ষে আমদানি শুল্ক ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব হবে না। কারণ বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে আমদানি শুল্ক। কাজেই আমদানি শুল্ক হার ব্যাপকভাবে কমালে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ কমে যাবে। এটা বাংলাদেশের রাজস্বব আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ বাংলাদেশ যদি আমদানি শুল্ক হ্রাস করে তাহলে সেটা শুধু মার্কিন যুক্তরষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না অন্য দেশের ক্ষেত্রেও শুল্কহার কমাতে হবে।
এতে রাজস্ব আয় ব্যাপকভাবে কমে যাবে। আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তুতি এবং সক্ষমতা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এটা আগামীতে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এই দ্বন্দ্ব চলাকালে রাজস্ব আয় বাড়বে না বরং আরও কমতে পারে। এই অবস্থায় যদি আমদানি শুল্ক কমানো হয় তাহলে বাজেট বাস্তবায়নের মতো অর্থ পাওয়া যাবে না। সেই অবস্থায় বিদেশি ঋণের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হতে হবে। পরিস্থিতির কারণে আমার এখানে স্ট্র্যাটেজিক ট্রেড করতে পারছি না।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের পুরোপুরি মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণ করা উচিত নয় আবার সংরক্ষণবাদী অবস্থানে থাকাও উচিত নয়। এই দুয়ের মাঝামাঝি অবস্থানে আমাদের থাকতে হবে। আমাদের রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে। আমাদের প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। সংরক্ষণশীল বাণিজ্য যদি অদক্ষতাকে লাই দেয় তাহলে সেটাও ভালো নয়। আমাদের দরকার কৌশলগত বাণিজ্য; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কৌশলগত বাণিজ্য করতে পারছে না বাংলাদেশ। কৌশলগত বাণিজ্যে ভিয়েতনাম আমাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকট থেকে আরোপিত উচ্চ হারের কর কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারিনি। বাণিজ্যের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের জন্য ডলার আয় করা। পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করেও ডলার আয় বাড়ানো যেতে পারে। আবার আমদানি পণ্যের বিকল্প হিসেবে স্থানীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমেও ডলার সাশ্রয় করা যেতে পারে। আমদানি কমিয়ে স্থানীয়ভাবে দক্ষ শ্রমঘন শিল্প গড়ে তোলার প্রতি জোর দিতে হবে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত আমরা আমদানি প্রতিস্থাপক শিল্পের প্রতিই গুরুত্ব দিয়ে এসেছি। এরপর থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনের প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে। বাণিজ্য ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক ভারসাম্যপূর্ণ কৌশল গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি আমদানি বিকল্প শিল্প গড়ে তুলতে পারি তাহলে ডলার সাশ্রয় হতে পারে।
আবার রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপন করা হলে ডলার আয় করা সম্ভব হবে। যখন যে কৌশল কার্যকর এবং উপযোগী মনে হবে সেটাই গ্রহণ করতে হবে। তবে যে ধরনের শিল্পই স্থাপন করা হোক না কেনো তার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হতে হবে ব্যাপক ভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, জাতীয় অর্থনীতিতে অধিকহারে মূল্য সংযোজনের ব্যবস্থা করা এবং দক্ষতা নিশ্চিত করা। তৈরি পোশাক শিল্প আমাদের দেশের রপ্তানি পণ্য তালিকার শীর্ষে রয়েছে; কিন্তু এই খাত জাতীয় অর্থনীতিতে তুলনামূলক কম পরিমাণ মূল্য সংযোজন করছে, অনেক সাবসিডি অনেক দিন ধরে পেয়ে আসছে, দক্ষতা বৃদ্ধিতেও ভিয়েতনাম ও চীনের তুলনায় পিছিয়ে আছে। তাই রপ্তানির বহুমুখীকরণও প্রয়োজন।
ড. এম এম আকাশ: অর্থনীতিবিদ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে