আজহারের খালাসের সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশ, মুক্তিতে বাধা নেই
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দিয়ে চূড়ান্ত রায়ের সংক্ষিপ্ত অনুলিপি প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। অন্য কোনো মামলায় না থাকায় তার কারামুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
তিন পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, আপিলকারী এ টি এম আজহারুল ইসলামকে সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস ও অবিলম্বে জেল হেফাজত থেকে মুক্তির নির্দেশ দেয়া হলো।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির স্বাক্ষরের পর সংক্ষিপ্ত এ রায় প্রকাশিত হয়।
পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চের অন্য ছয়জন বিচারপতি হলেন, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি ইমদাদুল হক, বিচারপতি মো. আসাদুজ্জামান, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দেন আপিল বিভাগ।
সংক্ষিপ্ত রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, বস্তুগত প্রমাণ এবং দাখিল করা আইনি যুক্তিতর্ক পুঙ্খানুপুঙ্খ পুনর্মূল্যায়নের পর, আপিল বিভাগ বিবেচনা করছে যে, এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করা ছিল ফৌজদারি আইনশাস্ত্রের মৌলিক নীতিগুলোর প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা, যার ফলে ন্যায়বিচারের চরম অবহেলা ঘটেছে। এছাড়া, আপিল বিভাগ এ টি এম আজহারুল ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সম্পর্কিত প্রমাণ সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে তার পূর্বের ব্যর্থতা স্বীকার করছে। এই মৌলিক নীতিগুলো মেনে চলতে ব্যর্থতার ফলে ন্যায়বিচারের প্রতি চরম অবজ্ঞা করা হয়েছে।
আপিল বিভাগ বলেন, সর্বোচ্চ আদালত বিচারিক দায়িত্বের গভীর বোধের সঙ্গে স্বীকার করেন যে, তার পূর্ববর্তী রায়ে, তারা এ টি এম আজহারুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ ও তাকে দোষী হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আপিল বিভাগের পূর্ববর্তী রায়টি দুঃখজনকভাবে এতো গুরুতর প্রকৃতির ফৌজদারি কার্যধারায় যাচাই-বাছাই এবং ন্যায্যতার উচ্চমান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রায়ে আরও বলা হয়েছে, আপিল বিভাগ দুঃখের সঙ্গে আরও স্বীকার করেন যে, আগের রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট এবং রাষ্ট্রপক্ষের মামলার অন্তর্নিহিত প্রমাণের দুর্বলতাগুলোর প্রতি যথাযথ বিবেচনা করা হয়নি। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্তকরণ এবং তার সাজা বহাল রাখা সম্ভব নয়’।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন তিনি। প্রথমবারের ওই আপিল শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন তখনকার আপিল বিভাগ।
এরপর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তবে সেই রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে ওই বছরের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রিভিউ শুনে ফের আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। এটিই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা, যেটি রিভিউ পর্যায়ে আসার পর ফের আপিল শুনানির অনুমতি পায়।
৬ ও ৮ মে দুদিনের শুনানি নিয়ে আগের দুই রায় বাতিল করে এখনকার আপিল বিভাগ বলেছেন, যে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ এই মামলায় ছিল, তা অতীতের আপিল বিভাগ ‘সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন’।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে আছেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে