ইরানে মার্কিন হামলা: আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন কাম্য নয়
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে স্পষ্টই যুদ্ধে রূপ দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন, দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিলেন; কিন্তু দুই সপ্তাহ পূরণ না হতেই মার্কিন যুদ্ধ বিমান বি-টু বিধ্বংসী হামলা চালাল ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায়। শুধু ইরান নয়, কাতার, সৌদি আরব, রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চিলি, লেবানন, কিউবা, ওমান এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অন্তোনিও গুতেরেস এই ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন।
তেহরান জানিয়েছে, এটা স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জাতিসংঘ সনদের ২(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘কোনো রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা কিংবা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করতে পারবে না।’ কিন্তু আমরা দেখছি ইরান যুদ্ধে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জোটবদ্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করে বলপ্রয়োগ করছে।
ইরানের বিরুদ্ধে তাদের যে পরমাণু বোমা তৈরির অভিযোগ, তা একেবারেই অমূলক বলে অস্বীকার করেছে ইরান। ইরান পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তির একটি স্বাক্ষরকারী দেশ। এই চুক্তির অধীনে ইরান পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে অধিকারী। চুক্তি বহির্ভূত কোনো কাজ তারা করেছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাহলে কেন আগ বাড়িয়ে ইরানের ওপর ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা?
প্রশ্ন উঠেছে, পারমাণবিক কর্মসূচির নিষ্ক্রিয়করণ নয়, বরং ইরানের রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন চাচ্ছে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যুদ্ধ দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করেছে, এবং ১১ দিনের যুদ্ধে দুপক্ষের সহস্রাধিক মানুষ নিহত ও প্রায় ৫ হাজারের মতো মানুষ আহত হয়েছে। মিশাইল ও ড্রোন হামলায় অন্যান্য ক্ষতি সীমাহীন। সমস্ত বিশ্ববাসীই এখন আতঙ্কিত হয়ে আছে, এই যুদ্ধ কোনদিকে গড়ায় কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
এটা স্পষ্টতই এক আগ্রাসী যুদ্ধ, এবং এই যুদ্ধ স্পষ্টভাবেই আন্তর্জাতিক আইনকে লঙ্ঘন করেছে বলে মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জাতিসংঘের মানবাধিকার নীতিমালা অনুযায়ী, মানুষের যে মর্যাদা, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন থাকা উচিত- আজকের আগ্রাসী যুদ্ধ তার সমস্ত কিছুকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিচ্ছে। এই যুদ্ধ মূলত মানবতার অপমান। কোনো যুদ্ধ দিয়েই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে