ভাতাভোগীদের উদ্বেগ দূর করুন
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণিতে সরকার হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ভাতা বিতরণ করে থাকে। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় যে ব্যক্তিদের সুবিধা দেয়া হয় তার প্রায় ৪৩ শতাংশই ভাতা পাওয়ার অযোগ্য। বিগত সরকারগুলোর আমলে উপকারভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে তারা তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ভাতাভোগীর তালিকা পর্যালোচনা করে অযোগ্যদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এ রকম সচ্ছল ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে প্রকৃত উপকারভোগীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে যারা এখন ভাতাভোগীর তালিকায় আছেন, তারা আসলেই ভাতা পাওয়ার যোগ্য কি না, তা দেখতে বলা হয়েছে। ফলে গত তিন মাস ধরে ভাত প্রদান বন্ধ রয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন সোয়া কোটি ভাতাভোগী।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এবার সময়মতো ভাতা না পাওয়ায় অনেকে বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর উপকারভোগীদের ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে; কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, ভাতা বন্ধ করে দেয়ার তথ্যটি গুজব। উপকারভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম প্রান্তিকের ভাতা ছাড় করা হবে। নভেম্বরের মধ্যে ভাতা দেয়া হবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বয়স্কভাতা পাচ্ছেন ৬০ লাখ; মাথাপিছু মাসিক ভাতা পান ৬০০ টাকা। এ বছর বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। বিধবা ভাতা পান প্রায় ২৮ লাখ; মাথাপিছু ভাতা ৫৫০ টাকা। বাজেটে বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পান ৩২ লাখ; মাথাপিছু ভাতা ৮৫০ টাকা। এ বছর বরাদ্দ ৩ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা পান ১৩ লাখ; মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৬০০ টাকা। এ বছর বরাদ্দ ৯ কোটি টাকা। বেদে জনগোষ্ঠীর ৬ হাজার জন ভাতা পান; মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা। বাজেটে বরাদ্দ সাড়ে ৩ কোটি টাকা। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা পান ৬০ হাজার; মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা। এ বছর বরাদ্দ ৩৬ কোটি টাকা। সাধারণত তিন মাস অন্তর উপকারভোগীদের ভাতার টাকা দেয়া হয়।
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ তালিকায় সচ্ছল ব্যক্তিরাও ঢুকে পড়েছেন। যারা ভাতা পাওয়ার যোগ্য নন, তারাও পাচ্ছেন। অথচ প্রকৃত উপকারভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় প্রকৃত উপকারভোগী নির্বাচন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মাঠপর্যায়ে অনেক জনপ্রতিনিধি না থাকায় প্রকৃত ভাতাভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। কারণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অনেক জনপ্রতিনিধি পলাতক।
বাস্তব পরিস্থিতি কিছুটা প্রতিকূল হলেও আমরা চাই শিগগিরই ভাতাভোগীদের উদ্বেগ দূর করা হোক। কারণ, তারা এমনিতেই অসহায়, অনেকেরই হয়তো কোনো আয়-রোজগার নেই, এই কয়টা টাকার জন্য পথ চেয়ে থাকেন মাস ধরে, টাকা পেলে ওষুধপত্র কিনবেন বা জরুরি কোনো প্রয়োজন মেটাবেন। তাদের মানবিক দিক বিবেচনা করে খুব জরুরি ভিত্তিতে এই ভাতা প্রদানের সমস্যা সমাধান করা হোক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে