পরপর আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত ও প্রতিকার জরুরি
সম্প্রতি দেশের নানা স্থানে একের পর এক আগুন লাগার কারণে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রথমে গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর শিয়ালবাড়ি এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৬ জন মারা গেল। তারপরই গত বৃহস্পতিবার ( ১৭ অক্টোবর) চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিকেল কোম্পানির গুদামে আগুন লাগে। সেই আগুন নেভাবে ১৭ ঘণ্টা আগুন লাগে। এর পর গত শনিবার (১৮ অক্টোবর) বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। সে আগুন নেভাবে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। এ আগুনের কারণে দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল।
এতে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসে, প্রথমত বাংলাদেশের আগুন নির্বাপণ ব্যবস্থা এখনো এত দুর্বল কেন? আগেও বেশ কয়েকটি কেমিক্যাল কারখানায় আগুন লেগে শত শত মানুষের প্রাণহানি হওয়ার পরও আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা কেন? ইপিজেডের মতো অতি নিরাপদ স্থানে কীভাবে আগুন লাগে? সেই আগুন নেভাবে কেন এত সময় লাগে? দ্বিতীয় দুটো ঘটনায় কোনো প্রাণহানি হয়নি, তবে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে? যখন বিনিয়োগের জন্য সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত, ঠিক সময় সিইপিজেড আগুন লাগার ঘটনায় বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলবে সেটাই স্বাভাবিক।
সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত আড়াই মাসে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় নারী-পুরুষ, শিশুসহ প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত দুই শতাধিক। যত্রতত্র বারবার আগুন লাগার পেছনে ২০টি কারণের কথা উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বলছে, মূলত অসচেতনতার জন্য এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বাড়ছে। বাংলাদেশের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে আগেও অনেক কথা হয়েছে, এখনো হচ্ছে, তবে তার প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। কোথাও বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে প্রতিবারই নতুন করে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, তারপর আগুন নিভতে নিভতেই সেগুলো ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে যায়।
তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও খতিয়ে দেখছে, ঘন ঘন এসব আগুন লাগার পেছনে কোথাও কোনো নাশকতার উদ্দেশ্য রয়েছে কি না। আমরা চাই এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো নিছক অসাবধানবশত দুর্ঘটনা না বলে সরকার বিশেষভাবে তদন্ত করে এর কারণ অনুসন্ধান করুক। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার আশু প্রতিকার জরুরি। এসব অগ্নিকাণ্ড কেবল ব্যক্তির অর্থ-সম্পদের ক্ষতি করে না, প্রাণহানি ঘটায় না, দেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে