Views Bangladesh Logo

২৪ ঘণ্টায় ৫ জনের মৃত্যু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নিন

র্ষা এলেই প্রতি বছর ডেঙ্গু বাংলাদেশে এক প্রাণঘাতী মশাবাহিত রোগে রূপ নেয়। অসংখ্য প্রাণ কেড়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চরম বিপর্যস্ত করে তোলে এই রোগটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায়, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত, অন্তত ৫ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। যাদের মধ্যে ৪ জনই বরগুনা জেলার। ডেঙ্গুতে ভুগে চলতি বছর এটি সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। একই সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫৯ জন নতুন রোগী, যাদের মধ্যে ১২৪ জনই বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত।

ডেঙ্গু নির্মূলে সরকারি পদক্ষেপ ছাড়া এই পরিস্থিতি সামনে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ডেঙ্গু আমাদের নতুন কোনো শত্রু নয়। সচেতনতা বাড়লেও এবং মাঝে মাঝে ডেঙ্গু দমনে সরকার নানারকম উদ্যোগ নিলেও, বাংলাদেশ এই মহামারির চক্রে আটকে রয়েছে। প্রতি বছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব বাড়ছেই। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিরোধযোগ্য এই রোগ এত মারাত্মক হয়ে উঠছে কেন?

গত কয়েক দিনে গণমাধ্যম বারবার ডেঙ্গু সংকট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং সমস্যার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে। বারবার সতর্ক করা হয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মনোযোগ দেয়া জরুরি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এসব সতর্কতা যেন কারও কানেই পৌঁছায়নি। আওয়ামী লীগের পতনের পর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসনিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে যা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। তবে নতুন প্রশাসক নিয়োগের পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। মশা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতিই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার প্রধান কারণ। অন্যদিকে একই রোগী বারবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, চিকিৎসা নিতেও দেরি হচ্ছে, সংকটের সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না, এসবও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু একসময় মৌসুমি রোগ থাকলেও মূলত বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব দেখা যেত। এখন এটি বছরব্যাপী এক ভয়ঙ্কর সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো দুর্বল নগর পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণহীন নির্মাণকাজ এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। কীটতত্ত্ববিদরা লক্ষ করেছেন যে, এডিস মশা এখন অনেক অস্বাভাবিক জায়গায় বংশবিস্তার করছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পানির জার, উঁচু দালানের পাইপলাইন এবং খোলা নির্মাণ সাইটে জমে থাকা পানিতে এডিশ মশা বংশবিস্তার করছে।

তারা আরও বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ একটি কারিগরি ব্যবস্থাপনা হলেও- সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্নীতিমুক্ত ও কার্যকর শাসন ব্যবস্থার অভাব। কার্যকর মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ধারাবাহিক, সমন্বিত এবং দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন; কিন্তু এই বছরও যে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তা দেখেই বোঝা যায়, এই ‘গুড গভর্ন্যান্স’ এখনো নিশ্চিত হয়নি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন গত ১৫ বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে; কিন্তু ফলাফল কোথায়?

তাই আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই- ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণকে এখনই জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করুন। অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থা ও গাফিলতির কারণে ইতোমধ্যেই অনেক মূল্যবান জীবন হারিয়ে গেছে। কেবল কথায় নয়, কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণের জীবন ও সুস্থতার বিষয়টিকে সরকার যথাযথ গুরুত্ব দিক।

জনগণকেও এ ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। প্রতিটি পরিবারকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের চারপাশে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে। স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। স্কুল, কলেজ ও কর্মস্থলগুলোতেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করতে হবে, যাতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সর্বত্র পৌঁছাতে পারে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ