মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক তুলতে হলে সরকার ও মালিক পক্ষের বোঝাপড়া জরুরি
ঢাকার রাস্তায় চলতে গেলেই দেখা যায় মুখের ওপর কালো ধোঁয়া উড়িয়ে চলে যাচ্ছে লঙ্কড়ঝক্কড় বাস-ট্রাক, বাসের বডি যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে এরকম অবস্থা, যাত্রী-পথচারীর জন্য এগুলো প্রচণ্ড হুমকিস্বরূপ। শুধু দুর্ঘটনা নয়, এসব গাড়ির কালো ধোঁয়াও পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরেই এসব মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক বন্ধের কথা হচ্ছে; কিন্তু কোনো সরকারের আমলেই তা যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি; এর কারণ এসব পরিবহনের বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। বেশিরভাগ যানবাহনের মালিকও কোনো না কোনো রাজনৈতিক নেতা, কিংবা অন্তত পরিবহন সেক্টরের মালিকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত গভীর। ফলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও উক্ত বিষয়ে কোনো সমাধান দিতে পারেনি।
আশার কথা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ ক্ষেত্রে কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সড়ক থেকে মেয়াদোর্ত্তীণ বাস-ট্রাক তুলে নেয়ার জন্য সরকার ৬ মাস সময় দিয়েছিল। যা শেষ হয়ে গেছে গত মে মাসে। সরকার আগেই জানিয়েছিল ২০ বছরের পুরোনো বাস ও ২৫ বছরের পুরোনো ট্রাক জব্দ করা হবে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় যানবাহনের সংখ্যা ৮০ হাজার ৩০৯। ছয় মাস সময় দেয়ার পরও যানবাহনের মালিকরা এসব লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন সড়ক থেকে তুলে নেয়নি। এ জন্য এবার সরকার পুরোনো যানবাহন উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছে। আজ রোববার (২০ জুলাই) থেকে ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হচ্ছে। এই অভিযান প্রথমবারের মতো দিনের পাশাপাশি রাতেও চলবে। তবে অন্যবারের মতো এবারও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এ অভিযান মানতে চাইছেন না। তারা ধর্মঘটের হুমকিও দিয়েছেন।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, পুরোনো যানবাহন সড়ক থেকে উঠিয়ে দেয়ার বিষয়ে গত ২৪ জুন বিআরটিএতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংস্থাটির কর্মকর্তা ছাড়াও পরিবহন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে পুরোনো যানবাহন জব্দ করে সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুরোনো যানবাহন তুলে নিয়ে সেগুলো কীভাবে স্ক্র্যাপ করা হবে, এর স্থলে মালিকরা আরেকটি বাস বা ট্রাক নামাতে পারবে কি না- এ বিষয়ে সরকারের কোনো নীতিমালা নেই। এ ছাড়া পুরোনো বাস-ট্রাকের পরিবর্তে নতুন যান নামাতে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার কথা বলেছে সরকার; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পরিপত্র জারি করেনি। ফলে সারা দেশে পুরোনো যানবাহনের মালিক-শ্রমিকরা সংক্ষুব্ধ হয়ে ধর্মঘটে যাওয়ার চিন্তা করছে।
দ্বিমুখী যুক্তি-তর্কে বিষয়টি জটিলতায় রূপ নিচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। আশঙ্কা করা যাচ্ছে এ নিয়ে আগামীতে বেশ ভালোই জটিলতা সৃষ্টি হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক রাস্তা থেকে উঠাতে সরকারকে যেমন কঠোর হতে হবে তেমনি পরিবহন মালিকদের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকেও সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। তা ছাড়া পরিবহন মালিকদেরও সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক যে পরিবেশ ও জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ এটা পরিবহন মালিকদেরও উপলব্ধি করতে হবে। সরকার ও মালিক পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষেই বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। সরকারও যদি একদিকে কঠোর অভিযান চালায়, আরেকদিকে যদি পরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটের হুমকি দেয় তাতে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান হবে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে