আজই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যও
অবশেষে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এই ঘোষণা দেবেন বলে নিশ্চিত করেছে ব্রিটেনের সরকারি সূত্র।
আরও কয়েকটি দেশেরও রোববারই আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা রয়েছে। এতে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে যুক্তরাজ্য হবে ১৪৭তম, যারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এটিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতোদিন লন্ডনের অবস্থান ছিল, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়া হবে কেবল শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবং সবচেয়ে কার্যকর সময়ে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুতি শেষ করেছেন স্টারমার। গত জুলাইয়েই তিনি সতর্ক করেছিলেন, ইসরায়েল যদি সেপ্টেম্বরের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি মেনে না চলে এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তির প্রতিশ্রুতি না দেয়, তবে যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।
তবে এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে ইসরায়েলি সরকার, বন্দিদের পরিবার এবং কয়েকজন কনজারভেটিভ নেতা। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একে “সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা” বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে ব্রিটিশ মন্ত্রীরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির আশা টিকিয়ে রাখতে এ পদক্ষেপ নেয়া নৈতিক দায়িত্ব।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট এবং পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে, যদিও ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
ব্রিটিশ বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ ও সহিংসতা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে। বিশেষ করে ই১ বসতি প্রকল্প কার্যকর হলে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথ একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ মাসের শুরুতে লন্ডনে স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকে ব্রিটিশ স্বীকৃতির অঙ্গীকারকে স্বাগত জানান। আলোচনায় উভয় পক্ষ একমত হন - ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের শাসন ব্যবস্থায় হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
অন্যদিকে কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাদেনক দ্য টেলিগ্রাফে লেখা এক নিবন্ধে বলেন, বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত না করে এখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া আসলে “সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করার সমান।”
এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের প্রায় ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে গত বছরই এই পদক্ষেপ নিয়েছে। পর্তুগাল, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়া লেবার পার্টির বহুদিনের দাবি। দলটির বামপন্থি এমপিদের চাপের মুখে স্টারমারকে ইসরায়েলের প্রতি কঠোর অবস্থান নিতে হয়েছে। জুলাইয়ের আগে তার ভাষণ দেওয়ার আগেই লেবারের অর্ধেকেরও বেশি এমপি ফিলিস্তিনকে তাৎক্ষণিক স্বীকৃতির আহ্বান জানিয়ে যৌথ চিঠি দিয়েছিলেন।
\
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে