শেখ হাসিনার ‘হত্যা-গণহত্যার নির্দেশনার’ চারটি অডিও ক্লিপ ট্রাইব্যুনালে
জুলাই গণআন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে জমা দেয়া চারটি অডিও ক্লিপ শুনেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সেগুলোতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের হত্যা-গণহত্যাসহ অন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের নির্দেশনা দিতে শোনা গেছে বলে দাবি প্রসিকিউশনের সাক্ষীর।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলাটিতে সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। জব্দ করা শেখ হাসিনার ৬৯টি অডিও ক্লিপসহ তিনটি মোবাইল ফোন ট্রাইব্যুনালে জমা দেন তিনি। এর মধ্যে চারটি অডিও ক্লিপ চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালকে শোনানো হয়। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলাটির অন্য দুই আসামি হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
৫৩তম সাক্ষী তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্যে বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনালাপের অডিও ক্লিপগুলোতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে একটি, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দুটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের একটি কথোপকথন রয়েছে।
অডিও ক্লিপগুলোতে শেখ হাসিনাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়, হেলিকপ্টার থেকে বোমা/গুলি বর্ষণ, ল্যাথাল উইপেন ব্যবহার, আন্দোলনকারীদের তালিকা করে পাকড়াও, রাজাকার ট্যাগ দিয়ে তাদের ফাঁসি দেয়া ও হত্যার হুমকি, ছাত্রলীগকে মাঠে নামিয়ে বোম্বিং, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, আগুন লাগানো, জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে প্রোপাগান্ডো ছড়ানোসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দিতে শোনা গেছে বলেও দাবি এই সাক্ষীর।
পরে সাক্ষী জোহাকে জেরা করেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। গ্রেপ্তার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
৩ আগস্ট শুরু হয়ে এ পর্যন্ত মামলাটির আরও ৫২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদেরকেও জেরা শেষ করেছেন মো. আমির হোসেন। উল্লেখযোগ্য সাক্ষীদের মধ্যে রয়েছেন আসামি থেকে প্রসিকিউশনের সাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ২ সেপ্টেম্বর দেয়া সাক্ষ্যে তিনি স্বীকার করেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে গণহত্যা সংঘটিত হয়। নিজের ভূমিকার জন্য ক্ষমাও চান ৩৬তম এই সাক্ষী।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৪৬তম সাক্ষী দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও ৪৭তম সাক্ষী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম এই মামলাটির বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল-১। ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ৩ আগস্ট চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলামের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপনের পর থেকে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা চলছে। মামলাটির সাক্ষী রয়েছেন ৮১ জন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে