Views Bangladesh Logo

স্কুলে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত: এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বর্ণনার ভাষা নেই

দুপুর ১টায় স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা কেউ ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে বাড়ি যাওয়ার জন্য, বারান্দায়-মাঠে দাঁড়িয়ে তারা গল্প করছে বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ-বা ক্লাসেই অপেক্ষা করছে পরবর্তী কোচিং ক্লাসের জন্য, বাড়িতে মায়েরা অপেক্ষা করছেন একটু পরেই স্কুল থেকে ফিরবে আদরের সন্তান, খেয়েদেয়ে ঘুমাবে; কিন্তু কয়েক মিনিট পরই তাদের জন্য আকাশ থেকে নেমে আসে ভয়ংকর এক দুঃসংবাদ; বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পড়ে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর।


আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিমানটি সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে। এটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই মডেলের বিমান। উল্লেখ্য, এটি একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান যা চীনে তৈরি। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, প্রশিক্ষণ বিমানটি ১টা ১৮ মিনিটে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে।


কাল দুপুরের পর থেকে বাংলাদেশের কোনো মানুষের নিশ্চয়ই আর কোনো দিকে চোখ নেই। আহত-নিহত সন্তানদের বাবা-মার মতোই সারা দেশের মানুষ হাহাকার করেছে, আহা, কীভাবে কী হয়ে গেল! এক মুহূর্তের মধ্যে নাই হয়ে গেল তাজা কয়েকটি ফুল! আহত যারা হয়েছে, অনেকের শরীর এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, আশঙ্কা করা হচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে। শেষ খবর পর্যন্ত এ দুর্ঘটনায় পাইলটসহ ২২ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত শতাধিক।


বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে- প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান কেন ঘনবসতিপূর্ণ শহরের উপরে? অনেকে পাইলটকে দোষ দিচ্ছেন, অনেকে আবার পাইলটকে দোষ না দিয়ে কর্তৃপক্ষকেই দোষ দিতে চান। এখন যে যাকেই দোষারোপ করুক- সেই প্রাণগুলো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। মা-বাবার বুক সারাজীবনের জন্যই খালি হয়ে গেল।


বাংলাদেশে যে কোনো বড় দুর্ঘটনা নিয়েই এক ধরনের রাজনৈতিক খেলা শুরু হয়। এখানেও সেই রাজনীতি থেমে নেই। কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এর মধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে জনগণের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন যা দুর্ঘটনাস্থলের ভিড় আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।


সবচেয়ে ন্যক্কারজনক বিষয় হচ্ছে, ছোট ছোট বাচ্চারা আগুনে দগ্ধ হয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে- এ দৃশ্যগুলো ভিডিও ধারণ করার জন্য একদল সাংবাদিক ও কন্টেন্ট নির্মাতা হুড়াহুড়ি করছেন। একটি শিশু জ্বলন্ত দেহে একা একা হাঁটছে কাঁদতে কাঁদতে, তাকে না ধরে তার ভিডিও ধারণ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মানুষের বিবেক আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে সেটাই প্রশ্ন। এর মধ্যেও আশার কথা হচ্ছে, রক্ত দেয়ার জন্য, যে কোনো সাহায্যের জন্যও অসংখ্য মানুষ এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।


এ মর্মান্তিক ঘটনায় ২২ জুলাই এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আমরাও গভীর শোক প্রকাশ করছি। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বর্ণনা দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই। তবে, যে কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটুক অবশ্যই তার সঠিক তদন্ত হতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ