Views Bangladesh Logo

সুদানের আল-ফাশারে গণহত্যা ও নিপীড়নে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষ

সুদানের আল-ফাশার শহরে আধাসামরিক র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) হামলার পর দারফুরে পালিয়ে আসা বেসামরিক নাগরিকরা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। শহরটিতে গণহত্যা ও নিপীড়নে নিখোঁজ রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। দেখা দিয়েছে চরম মানবিক সংকট।

১৮ মাসের অবরোধ শেষে গত রোববার উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী আল-ফাশার আরএসএফের দখলে যায়। এটি ছিল সেনাবাহিনীর শেষ শক্ত ঘাঁটি। শহরটির পতনের পর থেকেই জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বেসামরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

আলখির ইসমাইল নামে এক তরুণ প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের তাওইলা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানান, আল-ফাশার থেকে পালানোর সময় আরএসএফ যোদ্ধারা তাদের একটি দলকে থামায় এবং অধিকাংশকে হত্যা করে। তিনি বলেন, ‘তাদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমাকে চিনত তাই আমাকে হত্যা করেনি।’

তাহানি হাসান নামে এক নারী বলেন, ‘তারা হঠাৎ করেই এসে বাতাসে গুলি চালায়। এরপর সবাইকে মারধর করে, কাপড় ছিঁড়ে ফেলে, এমনকি আমাকে পর্যন্ত তল্লাশি করে।’

৭০ বছরের ফাতিমা আব্দুল রহিম পাঁচ দিন হাঁটতে হাঁটতে তাওইলায় পৌঁছেছেন। তিনি জানান, ‘পথে ছেলেদের মারধর করা হয়েছে, যা কিছু ছিল ছিনিয়ে নিয়েছে। আমাদের সঙ্গে আসা কিছু মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে।’

এক তরুণী রাওয়া আবদাল্লা জানান, তার বাবা নিখোঁজ। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না, তিনি জীবিত নাকি মৃত।’

আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেদতি দাগালো তার বাহিনীকে বেসামরিকদের রক্ষা করতে বলেছেন। তবে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, ‘তাদের প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস রাখা কঠিন।’

রয়টার্স জানায়, একজন আরএসএফ কমান্ডার অভিযোগ করেছেন যে সেনাবাহিনী নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ঘটনাগুলো ‘অতিরঞ্জিত’ করছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সংঘাত শুরুর পর থেকে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং কয়েক হাজার বেসামরিক নিহত হয়েছে।

গত সপ্তাহে মাত্র পাঁচ দিনে ৬২ হাজার মানুষ আল-ফাশার থেকে পালিয়েছে। চিকিৎসাসেবা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (MSF) জানিয়েছে, পালানো মানুষের অনেকেই ক্ষুধা ও তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।

এমএসএফ(MSF) জানিয়েছে, ‘পালানোর পথে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, অবরুদ্ধ করা হচ্ছে, এমনকি শিকার করা হচ্ছে।’ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ২৯ অক্টোবর আল-ফাশারের একটি হাসপাতালে আরএসএফ যোদ্ধারা অন্তত ৪৬০ জনকে হত্যা করেছে—যার মধ্যে রোগী, দর্শনার্থী ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও ছিলেন। প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, নিকটবর্তী উত্তর কর্ডোফান রাজ্যে বারা শহর দখলের পর ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে। ওই এলাকায় রেড ক্রিসেন্টের পাঁচ কর্মীকেও হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ‘বিভিন্ন সূত্র থেকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যার মধ্যে যৌন সহিংসতার ঘটনাও রয়েছে।’

সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের মুখপাত্র মোহাম্মদ এলশেখ আল জাজিরাকে বলেন, ‘বারা থেকে পালিয়ে আসা মানুষেরা চরম শারীরিক কষ্টে আছে। মরুভূমির উত্তাপ, পানির অভাব, আর অনিরাপদ পথ—সব মিলিয়ে তাদের অবস্থা ভয়াবহ।’

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সেনাবাহিনী ও আরএসএফের সংঘাত এখন বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক সংকটগুলোর একটি। খাদ্য সংকট, কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিপর্যস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ