বাজারের অবস্থা দেখে বাড়ানো হোক শিক্ষকদের ভাতা
বাড়ি ভাড়া বাড়ানোসহ ৩ দাবিতে টানা আট দিন আন্দোলনের পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া মাত্র ৫ শতাংশ বাড়াতে সম্মত হয়েছে সরকার, যা সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা হারে বাড়বে। তবে সরকারের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে অনশনে থাকা শিক্ষকরা আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ঘোষিত বাড়ি ভাড়া ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি এবং ন্যূনতম মাসিক দুই হাজার টাকা সংযোজনের ফলে অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়ি ভাড়া বাবদ ভাতা বৃদ্ধি হবে ১২ শতাংশের বেশি। রবিবার ফেসবুকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল পেজে দেওয়া পোস্টের এক ব্যাখ্যায় এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা বর্তমানে এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পান।
সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শিক্ষকদের দাবি ছিল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়ি ভাড়া। শিক্ষকরা এ দাবিতেই এখনো অনড়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পরপরই এক প্রতিক্রিয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, ৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার প্রজ্ঞাপন আমাদের আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয়। কিন্তু ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা ও ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমাদের সব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সরকার এক আদেশে বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা নির্ধারণ করে। এখন নতুন করে ৫ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা দেওয়া হলে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ছাড়া কেউই বেশি ভাতা পাবেন না। তথ্য অনুযায়ী, বাড়ি ভাড়া ৫ শতাংশ হারে এবং ন্যূনতম মাসিক দুই হাজার টাকা নির্ধারণ করলে ৮৯ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়ি ভাড়া বাড়বে ৭ থেকে ৮ শতাংশের বেশি, ৫৬ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়ি ভাড়া বাড়বে ১২ শতাংশ এবং ৭৫ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর বাড়ি ভাড়া বাড়বে ৯ শতাংশের বেশি।
বর্তমান বাস্তবতায় ৫ শতাংশ ভাতা বৃদ্ধি একপ্রকার উপহাসের মতো। সরকারের এই ঘোষণায় কর্মচারীদের ন্যূনতম প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। তারা যে প্রত্যাখ্যান জানিয়েছেন, তা স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। কারণ, বাস্তবে এই অল্প বৃদ্ধি জীবনযাত্রার ব্যয় সামান্যতমও লাঘব করতে পারবে না। ভাতার পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত জীবনযাত্রার ব্যয় ও মুদ্রাস্ফীতির হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। বর্তমানে সরকারি পরিসংখ্যানেই দেখা যাচ্ছে, দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ৯-১০ শতাংশের কাছাকাছি। এমন পরিস্থিতিতে মাত্র ৫ শতাংশ ভাতা বৃদ্ধি মানে ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে না, জীবনমানও বাড়াবে না। মানে শিক্ষকদের অবহেলিত জীবন আগের মতোই থাকবে। সরকারের উচিত দ্রুত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।
বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও জীবনমানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একটি বাস্তবসম্মত ও ন্যায্য ভাতা বৃদ্ধি ঘোষণা করা। নইলে শিক্ষকদের এই ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের ওপরও প্রভাব ফেলবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষকদের এই আন্দোলন ক্ষোভের প্রকাশ, বিদ্রোহের নয়। সরকারের উচিত ছিল শিক্ষকদের জীবনের বাস্তব চিত্র বিবেচনায় নিয়ে একটি সুবিবেচিত ও ন্যায্য প্রস্তাব দেওয়া। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ মানে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ। শিক্ষকদের প্রতি এমন অনীহা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও ক্ষতিকর বার্তা বয়ে আনবে। আমরা চাই বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষকদের ভাতা বাড়ানো হোক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে