Views Bangladesh Logo

গাড়ি ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি

চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

রিবহন খাতে নানারকম চাঁদাবাজির কথা আমরা ইতোপূর্বে শুনেছি; কিন্তু এমন অভিনব খবর শুনিনি যে, বিদেশ থেকে ফোন করে পরিবারের লোকজন কে কোথায় আছে সেই তথ্য দিয়ে, তাদের ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে গাড়ি ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা আদায় করা হয়। দুর্বৃত্তদের অনেকে দেশের বাইরে থেকে ফোন করে চাঁদা দাবি করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বসে গাড়ি ব্যবসায়ীদের হুমকি দিচ্ছে তারা। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয় ব্যবসায়ী ভাটারা থানায় জিডি করেছেন। যাদের টার্গেট করা হয়েছে তাদের অধিকাংশের শোরুম রাজধানীর প্রগতি সরণি, বারিধারা ও আশপাশ এলাকায়।

গতকাল বুধবার (২২ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাজধানীতে গত ৬ মাসে অন্তত ৪০ গাড়ি ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীদের পরিবারের সদস্যদের অপহরণের হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এমন অবস্থায় গত রোববার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনার প্রতিকার চাইলেন রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ে পেশাদার চিহ্নিত অপরাধীদের পাশাপাশি নতুন মুখও দেখা যাচ্ছে।

এদিকে চাঁদাবাজদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছেন রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ ১৫ অক্টোবর বারিধারায় বেগ অটোর সামনে চাঁদার দাবিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এখন পর্যন্ত ১২টি গাড়ির শোরুমে একই আদলে হামলা হয়েছে। তবে জড়িত একজনকেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত চাঁদার দাবিতে যেসব গাড়ি ব্যবসায়ীকে হুমকি ও শোরুমের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে তার মধ্যে আছে– কার সিলেকশন, বেগ অটো, টারবো অটো, হ্যালো কারস, বিসমিল্লাহ কারস, ওশান মোটরস, এলএনবি কার, বিশ্বাস ইম্পোটার্স এবং ওয়ালি কার। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, যেসব নম্বর থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছে সবই দেশের বাইরের নম্বর। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্তে নেমেছে। এ ছাড়া যে মোটরসাইকেল দিয়ে এসে ককটেল ফাটানো হচ্ছে তার নম্বরও ভুয়া।

বিষয়টি কতটা আতঙ্কজনক বোঝাই যাচ্ছে। আজ গাড়ির ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে, কাল হয়তো অন্য কোনো ব্যবসায়ীদের জিম্মি করবে দুর্বৃত্তরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এখনই বিষয়টির সুরহা না করে তাহলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে। তাতে করে সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যেই এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসবে। এ ধরনের অপরাধ শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়, পুরো অর্থনীতির জন্য হুমকি। ব্যবসায়ীরা যখন নিরাপদ মনে করবেন না, তখন বিনিয়োগ কমে যাবে, কর্মসংস্থান কমবে, কর আদায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।

অর্থনৈতিক স্থিতি বজায় রাখতে হলে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন খুবই প্রয়োজন। এমনিতেই বাংলাদেশ এখন নানা ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যদি এ রকম উৎপাত শুরু হয় তাহলে তা শুধু অর্থনীতিতে না, জনমনেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের উচিত দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। তা না হলে চাঁদাবাজির এই দাপট আমাদের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ