Views Bangladesh Logo

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে দুর্যোগের ঝুঁকি কমান

বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, এমন আশঙ্কা অনেক দিন থেকেই করা হচ্ছিল। জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসবিষয়ক দপ্তর (ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন-ইউএনডিআরআর) পূর্বাভাস দিয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে বিপর্যয়ের পরিমাণ ৪০ শতাংশ বাড়বে।

আজ শনিবার (২৪ আগস্ট) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস-সম্পর্কিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের (এপিএমসিডিআরআর-২০২৪) উদ্বোধন হয়। সেখানে উদ্বোধনী বক্তব্যে ইউএনডিআরআরের এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান মার্কো বলেন, এই পূর্বাভাস এটাই ইঙ্গিত দেয় যে ২০১৫ সালে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের জন্য বিশ্বব্যাপী সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্কে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো তা থেকে সরে যাচ্ছে।

২০১৫ সালে জাপানের সেন্দাই শহরে জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দুর্যোগের ঝুঁকি প্রশমনে টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং যথাযথ বিনিয়োগ নিশ্চিত করাই ছিল সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্কের প্রধান লক্ষ্য। লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়া মানে বিপর্যয় বাড়ানো। আর এই হারে বিপর্যয় বাড়তে থাকলে এই অঞ্চলে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। সম্প্রতি আমরা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ পরিণতি দেখছি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। স্মরণকালে ওসব অঞ্চলে মানুষ এমন বন্যা দেখেছেন বলে মনে করতে পারেন না। মূলত অতিবৃষ্টির কারণেই এই বন্যা। এই অতিবৃষ্টির কারণ প্রকৃতির ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা। পাশাপাশি এ বছরই আমরা স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ গরমও দেখেছি।

এখন এই দুর্যোগ থেকে বাঁচার উপায় কী? আঞ্চলিক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন ইউএনডিআরআরের এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান মার্কো তোসকানো-রিভালতা। রিভালতা বলেন, ‘মৌলিক বিষয় হচ্ছে, আমাদের (দুর্যোগ) মোকাবিলা ও ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম দ্বিগুণ করতে হবে।’

ইউএনডিআরআরের প্রযুক্তিগত এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতার মধ্যে ছিল ঝুঁকি হ্রাসে আঞ্চলিক দেশগুলোর ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন, ৩ পর্যায়ের রোডম্যাপ প্রণয়ন। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য জাতীয় দুর্যোগ কমিটি বাস্তবায়ন, দুর্যোগ ঝুঁকি ও ক্ষতির পরিসংখ্যান নির্ধারণ এবং সেই মতো পরিকল্পনা গ্রহণ, আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ, ঝুঁকি বুঝে বাজেট প্রণয়ন এবং অধিক ঝুঁকি সম্পন্ন দেশগুলোকে অর্থায়নে সহযোগিতা।

আমরা জানি দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন সপ্তম। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম। গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১৮৫টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বড় দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, পাহাড় ধসের মতো দুর্যোগ রয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের বিগত সরকার সেভাবে জাতিসংঘের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে নিতে পারেনি।

আমরা চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাতিসংঘের তহবিল দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সংকট, যা নিয়ে জরুরিভাবে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা, যেমন পানির লবণাক্ততা, রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু অভিবাসনের বিষয় উল্লেখ করেন। দুর্যোগ ঝুঁকি কমিয়ে বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সেটাই আমরা চাই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ