Views Bangladesh Logo

নারী শ্রমিকদের মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যবস্থা নিন

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি পোশাকশিল্প। বর্তমানে দেশের মোট শ্রমিকের প্রায় ৫৮ শতাংশ নারী পোশাকশিল্পে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। এক সময় তা ৮০ শতাংশের বেশি ছিল। অন্যান্য খাতের তুলনায় মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় এবং নারীর স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কারণে, বিশেষ করে মাতৃস্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কারণে পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) প্রকাশিত এক গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, পোশাকশিল্পে কর্মরত ৬৫ শতাংশ নারী শ্রমিক ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই গর্ভধারণ করছেন। এই নারীদের প্রতি তিনজনের একজন জীবনে অন্তত একবার অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার এবং প্রতি চারজনের একজনের গর্ভপাত বা মেনস্ট্রুয়াল রেগুলেশনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত ১৫ থেকে ২৭ বছর বয়সী ৭৭৮ জন শ্রমিকের অংশগ্রহণে প্রতি ছয় মাস অন্তর জরিপের মাধ্যমে গবেষণাটি করা হয়। এতে দেখা যায়, পোশাকশিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে প্রতি তিনজন নারীর দুজনের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, মাতৃত্বজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা ছাড়াও তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকরা ঘর ও কর্মস্থল দুই জায়গায় সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু পরামর্শমূলক সেবা থাকলেও প্রয়োজনীয় সেবা সরবরাহ সীমিত। জরিপে অংশ নেয়া শ্রমিকরা যেসব কারখানায় কাজ করেন সেগুলোর মধ্যে শুধু ২২ শতাংশ কারখানায় স্যানিটারি প্যাড পাওয়া যায়। মাত্র ১৪ শতাংশ কারখানায় পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী সরবরাহের তথ্য মিলেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বাস্থ্যের প্রতি নারীর অবহেলা ও বাল্যবিবাহের মূল কারণ শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব। নানারকম মাতৃস্বাস্থজনিত সমস্যায় ভোগার কারণে তাদের কাজ ছেড়ে দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

আমরা জানি, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পকৃত। মাতৃস্বাস্থ্যহানি নানা দিক দিয়েই সমাজে-রাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সেখানে পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পোশাকশিল্পে যে হারে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে এভাবে কমতে থাকলে অচিরেই তা ৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। এভাবে নারী শ্রমিক কমতে থাকলে একদিকে যেমন নারীর ক্ষমতায়ন কমবে, স্বাবলম্বী হওয়ার হার কমবে; অন্যদিকে শ্রমিক স্বল্পতায় দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষে থাকা তৈরি পোশাক খাতে স্থবিরতা নেমে আসতে পারে।

তাই নারী শ্রমিকদের মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে এখনই সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিন। এটা শুধু পোশাকশিল্পের নারীদের নয়, সব ক্ষেত্রের কর্মরত নারীদের জন্যই জরুরি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাতৃস্বাস্থ্যসহ নানারকম জটিলতার কারণে ব্যাংকসহ অন্যান্য কর্মস্থল থেকেও নারীর অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির এটি এক বিশেষ অশনিসংকেত। আর্থিক খাত থেকে নারী শ্রমিক ও কর্মীর সংখ্যা কমে যাওয়াটা শুধু অর্থনীতির জন্যই ক্ষতিকর নয়, সমাজে নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠায়ও বাধা সৃষ্টি করবে। তাতে করে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়বে বৈ কমবে না। তাই এখনই নারীর স্বাস্থবিষয়ক সচেতনতা জরুরি। আর তার জন্য চাই প্রকৃত শিক্ষা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীর স্বাস্থ্যশিক্ষা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ