রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সশস্ত্র বিদ্রোহ বন্ধে উদ্যোগ নিন
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের খবর দেশের জনগণকে উদ্বিগ্ন করছে। গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসী চক্রের তৎপরতা দিন দিন অসহনীয় মাত্রায় বেড়েই চলেছে। ফলে তারা কক্সবাজার-টেকনাফ অঞ্চলকে অনেকাংশে গ্রাস করে ফেলছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, নিরাপত্তা, পরিবেশসহ অনেক কিছু বর্তমানে হুমকির মুখে চলে যাচ্ছে। ১৩ লাখের অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দিন দিন তাদের সন্ত্রাসী শক্তি বৃদ্ধি করছে। তারা একে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে মুখোমুখি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। খুনখারাবি, অপহরণ, শিশু ও নারী পাচার এবং মাদক পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে যা দেশের জন্য অশনিসংকেত!
শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গা তরুণদের অনেকে ‘জিহাদ’ ও ‘যুদ্ধ’ করতে প্রস্তুত। নিজ দেশে ফেরার প্রশ্নে স্বাধীন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নও দেখছেন তারা। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে গত এক-দেড় বছরের মধ্যে এমন চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা তৈরি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সাংবাদ মাধ্যম বিবিসি বাংলার বরাতে জানা যাচ্ছে, ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন রোহিঙ্গারা স্বীকার করেছেন যে, ক্যাম্পে অন্তত চারটি সংগঠন ‘সশস্ত্র বিদ্রোহ’, ‘জিহাদ’ বা ‘যুদ্ধের’ জন্য উদ্বুদ্ধ করার তৎপরতায় লিপ্ত আছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়মিত ঘরোয়া বৈঠক এবং আলাপ আলোচনা হয়। গোষ্ঠীগুলো হলো আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামিক মাহাজ এবং আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)।
অন্যদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করতে পারে– এমন আশঙ্কা করে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ আইসিজি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব স্থগিত করেছে এবং নতুন করে সদস্য নিয়োগ বাড়িয়েছে। সক্রিয় গোষ্ঠীগুলো ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করে শরণার্থীদের রাখাইনে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে বলেও উল্লেখ রয়েছে আইসিজির প্রতিবেদনে।
প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের এমন ভয়ংকর আচরণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেশের জনগণ কেন মেনে নেবে। তাই সচেতন নাগরিক সমাজের উৎকণ্ঠা বাড়াটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে তাদের সব ধরনের সন্ত্রাসী গ্রুপের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে হবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই। পাশাপাশি তাদের জনসংখ্যা প্রজনন পরিবার পরিকল্পনার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চালানো খুবই জরুরি।
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীদের রাখাইন রাজ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে হবে। যতদিন রোহিঙ্গারা ফিরে না যাচ্ছে ততদিন ওই সব ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা ছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে যথাযথ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান কামনা করি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে