শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘ ছুটির ক্ষতি কাটাতে বাড়তি উদ্যোগ নিন
পবিত্র ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উপলক্ষে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ছুটির ফাঁদে পড়েছে। এ বছর ঈদের ছুটি গ্রীষ্মকালীন অবকাশের সঙ্গে মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯ দিনের একটানা ছুটি দেয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য ছুটির সময়সীমা একটু বেশি, যেখানে শিক্ষার্থীরা ৩ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ছুটির সুবিধা পাচ্ছে। এর আগে পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা টানা ৪০ থেকে ৫০ দিন ছুটি কাটিয়েছে। তা ছাড়া ঈদুল ফিতরের পর শুরু হয়েছিল এসএসসি পরীক্ষা, অনেক স্কুলে সিট পড়ায় এ সময় পাঠদান বন্ধ ছিল অনেক স্কুলে। এবার নতুন বই পেতেও দেরি হয়েছে প্রায় তিন-চার মাস। তার মানে বছরের অর্ধেকটা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া তেমন কিছু হয়নি বললেই চলে।
ছুটির ক্ষতি পোষানোর জন্য ঈদুল ফিতরের আগে অনেক স্কুলে শনিবার ক্লাস চলেছে; কিন্তু তাতেও যে এ ক্ষতি পোষানো যাবে মনে হয় না। এবার স্কুল শুরু হলে শিক্ষার্থীদের হাতে থাকবে বছরের পাঁচ মাস। তারপরই শুরু হয়ে যাবে বার্ষিক পরীক্ষা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাধ্যমিক স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ের দুই-তিনটি অধ্যায়ের বেশি সম্পন্ন করতে পারেনি। তাহলে বাকি পাঁচ মাসে কীভাবে সম্ভব তাদের পক্ষে পুরো সেলেবাস সম্পন্ন করা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ফেরাতে বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে শিক্ষক ও অভিভাবকদের। বিশেষ করে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের উচ্চ তাপমাত্রার সময় একটানা ক্লাস চালাতে শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পরামর্শ ভালো হলেও আমরা জানি বাস্তবে তার প্রয়োগ হবে সামান্যই। কারণ হয়তো প্রচণ্ড গরম পড়বে, না-হয় হবে প্রচুর বৃষ্টি। বন্যারও আশঙ্কা আছে এবার। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা এক কঠিন চক্রে পড়েছে।
সেলেবাস সম্পন্ন না করে পরের ক্লাসে উঠলে অনেক শিক্ষার্থীই ঠিক মতো পাঠ্যপুস্তকের নির্ধারিত বিষয়টি ঠিক মতো বুঝতে পারবে না। বছরে গড়ে প্রায় ৩ মাস যদি স্কুল বন্ধ থাকে তাহলে কারও পক্ষেই সম্ভব না সেলেবাস সম্পন্ন করা। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের যেন এ এক করুণ নিয়তি। এই অশুভ চক্র থেকে শিক্ষার্থীদের বের করা না গেলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধসে পড়বে তা পরিষ্কার বলা যায়।
তারপরও এখনো সময় আছে এই ক্ষতি পোষানোর। দীর্ঘ ছুটির ক্ষতি কাটানোর ব্যবস্থা নিতে বাড়তি উদ্যোগ নেয়া এখনই প্রয়োজন। স্কুলগুলো খোলার সঙ্গে সঙ্গে যেন পুরো দমে পাঠদান শুরু হয় তার জন্য সুপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিজ্ঞান, অংক, ইংরেজির মতো বিষয়গুলো বাড়তি চাপ দিয়ে আদায় করে নিতে হবে। এসব বিষয় ফাঁকি দিলে সারাজীবনই ফাঁকি থেকে যায়। শুধু নামমাত্র পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দিয়ে তাদের যেন সারাজীবনের ক্ষতির মধ্যে ফেলা না হয়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে