মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ আমলে নিন
গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই আমরা দেখে আসছি বাংলাদেশে আতঙ্কজনক মাত্রায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। গুম-খুনের পাশাপাশি নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। এমনকি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকার পরও কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের সমর্থক বিধায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাকে-তাকে আওয়ামী লীগ ট্যাগ দিয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। পাশাপাশি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না হলেও তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এবং নতুন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রোধে নির্বাচনের আগে যে অল্প সময় রয়েছে, তার মধ্যেই একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর বিস্তৃত পরিসরে যে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে তা প্রত্যাহারের পাশাপাশি দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ সব মামলা তুলে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে সেখানে। সেই সঙ্গে র্যাব বিলুপ্ত করা এবং সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের ক্ষমতা সীমিত করার মতো সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে ছয় সংস্থার চিঠিতে।
সংস্থাগুলো হলো সিভিকাস, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, ফোরটিফাই রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কার এখনো হয়নি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জবাবদিহি ও সংস্কার প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছেন না। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে যে স্বল্প সময় রয়েছে, সেই সময়েই আমরা মানবাধিকার রক্ষার পরিসর বাড়াতে আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা বিধান এবং ভবিষ্যতে পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার মতো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতো দেশের নাগরিক সমাজও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গত বেশ কয়েক মাস ধরেই ভীষণ উদ্বিগ্ন; কিন্তু দেশের নাগরিকদের উদ্বেগ যেমন সরকার তেমন গুরুত্ব দেয়নি, এখন মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আহ্বানও খুব গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার চিঠির বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সরকারের পক্ষে তাদের সবকিছু মেনে নেয়া কখনোই সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজ করবে, আমরা এটাই মনে করি। হিউম্যান রাইটস সংগঠনগুলো তাদের কাজ করবে। সরকারের পক্ষে তাদের সবকিছু মেনে নেয়া কখনোই সম্ভব হবে না। অবশ্যই আমরা যখন কোনো মানবাধিকার নিয়ে কোনো কনসার্ন (উদ্বেগ) আসে, সেটাকে আমরা বিবেচনায় নিই এবং সরকারের পক্ষে যেটুকু সম্ভব সেটা করা হয়।’
সরকারকে অবশ্যই তার দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী তার মতো করে কাজ করতে হবে, তারপরও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগও আমলে নিতে হবে। এর মধ্যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেখানে অবহেলা করলে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আরও বাড়বে। তাই নির্বাচনের আগেই সরকারকে এমন ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে যেখানে নতুন করে আর কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটবে না। তা না হলে নির্বাচন শুধু প্রশ্নবিদ্ধ না- এমনকি নির্বাচন বানচালও হয়ে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, বর্তমানে বাংলাদেশ খুবই স্পর্শকাতর অবস্থায় আছে। তাই সবদিক বিবেচনা করে সরকারকে সাবধানে পা ফেলতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে