Views Bangladesh Logo

সালিশি বৈঠকে পিটিয়ে হত্যা

নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সালিশি বিচার এক প্রাচীন সমাজের প্রতীক যা এখনো বাংলাদেশের সমাজে বহাল। সালিশি বিচারের মাধ্যমে অনেক সায়য়িক সমস্যার সমাধান হয়তো হয়; কিন্তু তাতে কোনোভাবেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। তার চাইতেও বড় কথা সালিশি বিচারে সবসময় ক্ষমতাবানদেরই জয় হয়। আরও আতঙ্কজনক বিষয় সালিশি বিচার অনেক সময় রূপ নেয় মারামারি-খুনাখুনিতে। যার সাম্প্রতিক নজির চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় দেখা গেল। আজ (৩ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রামে এক কিশোরীকে ‘তুলে নিয়ে বিয়ের ঘটনায়’ বসা সালিশি বৈঠকে বাবাকে ‘পিটিয়ে’ হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী (১৪)। তাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করা হয়। এ ঘটনা মীমাংসার জন্য শুক্রবার রাতে সালিশ বৈঠক ডেকে মেয়ের বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড হাটহাজারী থানার সন্দ্বীপ কলোনিতে। পুলিশ বলছে, পিটিয়ে খুনের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সালিশ বৈঠকে হৈচৈ হয়েছিল বলে তারা শুনেছেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

সালিশে না বসে প্রথমেই যদি ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হতো তাহলে হয়তো খুনের ঘটনাটি ঘটত না। আর এরকম একটি ঘটনার পর তা পুলিশকে না জানিয়ে সালিশে বসা হয় কী করে? শিশু অপহরণের দায়ে তো ছেলেটিকে আগেই গ্রেপ্তার করা দরকার ছিল। এতে মেয়েটির পরিবারেরও যেমন অসচেতনতা ফুটে ওঠে তেমনি সালিশে যারা বসেছেন তাদের সবাই আইনবহির্ভূত কাজ করেছেন যার জন্য তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনতে হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কিশোরীকে নোয়াখালী থেকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দিয়েছে পুলিশ; কিন্তু এখন অবশ্যই কিশোরী অপহরণ ও খুনের বিচার যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে। কোনোভাবেই যেন অপরাধীরা পার পেয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ঘটনায় শুধু একটি জীবনই ঝরে যায়নি বরং আমাদের সমাজে প্রচলিত প্রাচীন সালিশ প্রথা, বিচারহীনতা ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের চিত্রটি নগ্নভাবে উন্মোচিত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কে দিয়েছে এই সালিশদারদের হাতে জীবন-মরণ নির্ধারণের ক্ষমতা? কেন একটি আইনি বিষয়ে রাষ্ট্রীয় বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে এভাবে বিচারকার্য সম্পন্ন করা হয়?

বাংলাদেশে এখনো অনেক গ্রামাঞ্চলে সালিশ প্রথা চলে আসছে, যেখানে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি নিজেদের ইচ্ছে মতো রায় দেন, কখনো তা হয় লাঞ্ছনা-জরিমানার মাধ্যমে এসব ফৌজদারি অপরাধের বিচার সম্পন্ন হয়। এ ধরনের সালিশে আইনের কোনো জায়গা নেই, নেই ন্যায়বিচারের ন্যূনতম মানদণ্ড। বরং বহু ক্ষেত্রেই তা হয়ে ওঠে নিরীহ ও অসহায় মানুষের বিরুদ্ধে নির্যাতনের আরেক নাম। তাই এখনই মোক্ষম সময় গ্রামাঞ্চলের সালিশি প্রথার সহিংসতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ