Views Bangladesh Logo

রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করা জরুরি

ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকে ছেয়ে গেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের রাস্তাঘাট। অথচ সড়কের অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ- কোনো যানবাহনই উচ্ছেদ করতে পারছে না সরকার। যদিও ২০২১ সালে ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট, সেই রায় বহাল রেখে অন্তর্বর্তী সরকারও উদ্যোগ নিয়েছিল। তবু হাইকোর্টের এই নির্দেশনা অমান্য করে দেশের অলিগলিসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলয় চলছে এসব যানবাহন। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি, যা দেশের জন্য উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ২০ শতাংশই ঘটে ব্যাটারিচালিত যানের মাধ্যমে। প্রশ্ন হচ্ছে- এসব অবৈধ যান চলছে কীভাবে? বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব যান বন্ধ না হওয়ার পেছনে রয়েছে কিছু অসাধু ব্যক্তি ও শক্তিশালী সিন্ডিকেট। জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় নেতা, চাঁদাবাজ এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও। এসব অবৈধ যানচালকরা বলছেন, তারা নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে একটি করে টোকেন নিচ্ছেন, এরপর নির্বিঘ্নে চালাচ্ছেন তাদের অবৈধ যান। আমরা বলব, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করে এসব অবৈধ যান চলাচল দ্রুত বন্ধ করা হোক।

মাঝে মধ্যে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব অবৈধ অটোরিকশা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেন; কিন্তু অভিযানের পরের দিন থেকে রাস্তায় আবার অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা যায় যা অনভিপ্রেত। এ কাজ করতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও ব্যর্থ হয়েছে। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে চেষ্টা চালিয়েছে। তবে তারাও এগোতে পারেনি। ফলে এসব যান সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়াচ্ছে।

বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, ২০২৪ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ২৯৪ জন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন ২ হাজার ৬০৯ জন। যা মোট নিহতের ৩৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিহত ১ হাজার ৭২৩ জন ছিলেন তিন চাকার যানবাহনের যাত্রী। যা মোট নিহতের ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ।

গত এক দশকে প্যাডেলচালিত রিকশায় ব্যাটারি সংযোজন করার প্রবণতা বেড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ জেলা শহরগুলোতে এখন ব্যাটারিচালিত রিকশার আধিক্য। প্যাডেলচালিত রিকশা তেমন দেখাই যায় না কোথাও।

রিকশাচালকরা বলছেন, ব্যাটারিতে বাহন চললে শারীরিক কষ্ট কম হয়। তা ছাড়া তুলনামূলক দ্রুত গন্তব্যে যাওয়া যায়, আবার একই সময়ে বেশি ভাড়া পাওয়া যায়। তবে প্রশাসন এ বিয়ষটিতে আপত্তি জানাচ্ছে। পুলিশ প্রায়ই তাদের বাধা দেয়। আবার এসব রিকশা থেকে টাকা পেলে চলার সুযোগ দেয়া হয়।

প্রতিটি ইজিবাইক ও অটোরিকশায় একাধিক ব্যাটারি থাকে। দিন শেষে এই ব্যাটারিগুলো সারারাত চার্জে রাখা হয়। এ জাতীয় বাহনগুলো তাই ব্যবহারকারীরা জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগে চার্জ করেন। ফলে বিশেষজ্ঞরা সামাজিকভাবে বিদ্যুৎ ঘাটতি সৃষ্টির জন্য এই বাইকগুলোকে কিছুটা দায়ী করে থাকেন। এসব যান বন্ধ করলে বিদ্যুতেরও সাশ্রয় হবে। অবশ্য এসব যান চলাচল বন্ধ করার আগে ভাবতে হবে এখানে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের রুটিরুজির কথাও। তাই কর্তৃপক্ষকে শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের বিকল্প খুঁজতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ