Views Bangladesh Logo

প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করুন

অ্যান্টিবায়োটিক এক ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। আবার এই অ্যান্টিবায়োটিকই ভুল ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিকের সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোতে। আর এই তালিকায় বাংলাদেশের স্থান প্রথম সারিতে আছে। কারণ বাংলাদেশের বহু মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়েই ফার্মেসি বা হাটবাজার থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করে থাকে। তাদের মধ্যে কোনো ধারণাই নেই যে, এর ফলে তার শরীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী (রেজিস্ট্যান্স) হয়ে যাচ্ছে।

সেই সঙ্গে তারা জানে না যে, ভবিষ্যতে হয়তো আর কোনো ওষুধেই তাদের শরীরের অসুখ সারবে না। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় সব জরুরি ওষুধ এবং বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ৫০ শতাংশের বেশি তার কার্যকারিতা হারিয়েছে। এই গবেষণা প্রতিবেদন দেশের জন্য গভীর উদ্বেগের বটে।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় শুধু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের কারণে। যার ফলে বিশ্বের সব দেশই কমবেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ডব্লিউএইচও ধারণা করছে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সালে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় বাড়বে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার।

সাংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবিদেন বলছে, গ্রাম বাংলার হাটবাজারে এমনকি শহেরের বিভিন্ন স্থানে অনেক ওষুধ ব্যবসায়ী বিভিন্ন কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিকসহ হরেক রকম ওষুধ বিক্রি করছেন। আর এসব ওষুধ কম দামে কিনতে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড়। দেখা গেছে, এসব ওষুধ বিক্রেতাদের চিকিৎসাবিজ্ঞান কিংবা ফার্মেসি বিষয়ে কোনো পড়াশোনা নেই। নেই ডাক্তারি বা ওষুধ বিক্রির লাইসেন্সও। অথচ বছরের পর বছর ধরে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছেন তারা। আর অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, দরিদ্র মানুষও তাদের কাছ থেকেই নিয়মিত ওষুধ কিনে খাচ্ছে। তুলনামূলক স্বল্পমূল্যে এসব ওষুধ পাওয়া যায় বলে একশ্রেণির মানুষের কাছে এসব ওষুধ বিক্রেতার বেশ গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। তা ছাড়া শহর হোক আর গ্রামই হোক, ফার্মেসিতে গেলে প্রমাণ মিলবে সেখান থেকে কতসংখ্যক মানুষ ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয় করে থাকে। ফলে দেশে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিষয়টি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখছে এবং এর থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে অন্যতম ২০১৬ সালে সরকার ওষুধ বিক্রির নীতিমালায় ‘মডেল ফার্মেসি’ প্রবর্তন করেছে, যেখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে মডেল ফার্মেসি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, বাস্তবে নজরদারির অভাবে বিক্রেতা বা ক্রেতা কেউই নিয়মনীতি মানেন না। তা ছাড়া দেশে এখন পর্যন্ত কোনো বাস্তবসম্মত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অ্যান্টিবায়োটিক অপব্যবহারের ফলে শিশু এবং হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।

এমতাবস্থায় দেশে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং তার সমস্যা ও সংকট চিহ্নিত করে সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাই প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন করে তার সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ