Views Bangladesh Logo

ধর্ষণ ও গণপিটুনি বন্ধ করুন

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) দেওয়া জুন মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, চলতি জুনে দেশে ধর্ষণ ও গণপিটুনিতে হত্যার সংখ্যা বেড়েছে। দলবদ্ধ ধর্ষণসহ নারীর প্রতি নির্যাতনও কমেনি এ মাসে। শারীরিক নির্যাতন, নিগ্রহ বেড়েছে। গত মে মাস থেকে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে দেশে অন্তত ৬৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মে মাসে এই সংখ্যা ছিল ৫৯। একই সময়ে বেড়েছে গণপিটুনির ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা। জুনে ৪১টি গণপিটুনির ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ৪৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আগের মাসে ৩৪টি ঘটনায় সাতজন নিহত ও ৩৮ জন আহত হয়েছিলেন। জুন মাসে ধর্ষণের শিকার ৬৩ জনের মধ্যে ১৯ শিশু ও ২৩ কিশোরী রয়েছে। অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২ শিশু, ৭ জন কিশোরী ও ৮ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ১ জন কিশোরী ও ৩ জন নারী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৭টি, যৌন হয়রানি ৩৯টি, শারীরিক নির্যাতনের ৫১টি ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার (১ জুলাই) প্রকাশিত মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) জুন মাসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

দেশে যে ধর্ষণ, গণপিটুনি বেড়েছে এর জন্য গবেষণা, জরিপেরও প্রয়োজন নেই। গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবরেই জানা যায় দেশে এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গণ্যঅভ্যুত্থানের পর থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশে ধর্ষণ ও গণপিটুনির হার বেড়েছে। সাম্প্রতিক এমন সহিংস পরিস্থিতির পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। এক বছর হয়ে গেলেও অন্তবর্তী সরকার এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথার্থ উন্নত করতে পারেনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

বাংলাদেশে সংবিধানে, অপরাধী-নিরপরাধী নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে আইনের আওতাও বিচার লাভ এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুযায়ী, অপরাধী ধরা পড়লে তাকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করতেই হবে। এর ব্যতিক্রম করলে দণ্ডবিধির ১৮৭ ধারা অনুযায়ী অনূর্ধ্ব ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে আইনের প্রতি আস্থার অভাব থেকে অনেকে বিচারের দায়ভার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন। গণপিটুনি একটা অপসংস্কৃতির প্রভাবও। সম্প্রতি যে মব-জাস্টিস বেড়েছে এটা তারও একটা খারাপ প্রবণতা। দেখা যাচ্ছে নানারকম মবকে রাষ্ট্রীয়ভাবেও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও মবকে মব না বলে প্রেসার গ্রুপ বলছেন, যা মবকে আরো উৎসাহ যোগাচ্ছে।

যে করেই হোক গণবিচার, মব, গণপিটুনি এসব বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণের সুস্পষ্ট বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আইন যদি তার নিজের পথে না চলে তার ভুক্তভোগী একদিন সবাইকেই হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না করা গেলে কোনোভাবেই হত্যা, ধর্ষণ, খুন, গণপিটুনি নিয়ন্ত্রন করা যাবে না। আর এসব নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। যা কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ