Views Bangladesh Logo

খাদ্যগুদামের চাল নিয়ে কারসাজি বন্ধ করুন

গরা এসে এক সময় এদেশের ধন-সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত। কথিত আছে, তারা ক্ষেতের ফসল পর্যন্ত কেটে নিয়ে যেত। আজ মগরা নেই; কিন্তু দেশে এখন দেশীয় মগদেরই দৌরাত্ম্য বাড়ছে। খাদ্যগুদামের চাল নিয়ে চালবাজি করে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমন এক খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার। 


সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, রাজশাহীর খাদ্যগুদামে নিম্নমানের ও খাওয়ার অনুপযোগী চাল ঢুকিয়ে পরে তা পাল্টে দেয়ার প্রমাণ মিলেছে। এ কাজে জড়িত আছেন গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাই। তাদের যোগসাজশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে চাল সরবরাহ ও পাল্টানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত শনিবার সকালে জেলার বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে চাল পাল্টানোর ঘটনা। 

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি খাদ্যগুদামগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। প্রান্তিক কৃষকের ধান ন্যায্যমূল্যে ক্রয়, সাধারণ মানুষের জন্য সুলভমূল্যে চাল বিতরণ- এসবই গুদামের মূল দায়িত্ব; কিন্তু দুঃখজনকভাবে বারবার শোনা যাচ্ছে, এসব গুদামে অস্বচ্ছ লেনদেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কাহিনি। সর্বশেষ রাজশাহীর খাদ্যগুদামে চাল নিয়ে ‘চালবাজি’ এবং কোটি টাকার কারসাজির ঘটনা প্রমাণ করছে, এ যেন শর্ষের ভেতরেই ভূত লুকিয়ে থাকার ব্যাপার।

নিয়ম অনুযায়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে তা চুক্তিবদ্ধ মিলারদের মাধ্যমে চাল বানিয়ে সংগ্রহ করার কথা; কিন্তু অভিযোগ আছে, কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ধান না কিনেই সরাসরি নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে ধান ছাঁটাই, পরিবহন ব্যয়সহ ভালো চালের খরচ দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে যোগসাজশ করে অসাধু কর্মকর্তারা এই অনিয়ম করেছেন।

খাদ্য নিয়ন্ত্রকের যোগসাজশেই যদি এমন কারসাজি ঘটে তাহলে প্রশাসনের ওপর আর মানুষ আস্থা রাখবে কীভাবে? চালের গুণগতমান পরিবর্তন, ওজন কম দেখানো, কালোবাজারে বিক্রি এমনকি ভুয়া তালিকার মাধ্যমে চাল গুদামে ঢোকানো- এসব অভিযোগ নতুন নয়। অথচ প্রতি বছরই সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে খাদ্যশস্য মজুত ও বিতরণ ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ রাখতে। এ ধরনের কারসাজি শুধু সরকারের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে মানুষের আস্থার। সাধারণ মানুষ যখন ন্যায্যমূল্যে চাল পাচ্ছে না, কৃষক যখন তার উৎপাদিত ধান ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছে না তখন এই দুর্নীতি তাদের ক্ষোভকে তীব্র করছে। ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের খাদ্যনীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।

এসব লুটেরাদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা না গেলে এসব চালবাজি বন্ধ হবে না। পাশাপাশি খাদ্যগুদামের ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থা, ও নিয়মিত অডিট নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার নিয়ে কারসাজি, কোটি টাকার দুর্নীতি- কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। রাজশাহীর ঘটনাটি হুঁশিয়ারি সংকেত- এখনই ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে খাদ্যগুদামগুলো আস্থার জায়গা থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাবে।

সরকারি তথ্যমতে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও খাদ্যগুদাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালে নতুন করে আরও ১৯৬টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের প্রকল্প এবং ২০২৪ সালে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩১৯টি গুদাম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়। নানা অপশাসন, দুর্নীতির দায়ে তো আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, এখন তাহলে এই কারসাজি করছে কারা? অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই খুব দ্রুত এই বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রক্ষক যদি এমন ভক্ষক হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ তাহলে যাবে কোথায়? প্রশাসনের এই ব্যর্থতার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ