Views Bangladesh Logo

ময়লা বাণিজ্য ঘিরে মাফিয়াচক্র বন্ধ করুন

য়লার মধ্যে ‘মধু’ খুঁজে পাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। ময়লা বাণিজ্য ঘিরেও যে মাফিয়াচক্র গড়ে উঠতে পারে তা কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে আওয়ামী লীগ নেতারা ময়লার ‘মধু’ খেয়েছেন, এখন সেখানে ভাগ বসাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। আজ সোমবার (১৪ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ময়লা বাণিজ্যে বিএনপি নেতাদের পকেটে যাবে ৪১৮ কোটি টাকা।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহে গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পরিচ্ছন্ন কর আদায় করেছে ১৩১ কোটি টাকা। এ খাতে ব্যয় হয়েছে তাদের প্রায় ১০০ কোটি টাকা। জনবলও রয়েছে প্রায় ৪ হাজার। এর মধ্যে ঘরে ঘরে গিয়ে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহের নামে একসঙ্গে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ২ হাজার লোকবল। এখন বর্জ্য সংগ্রহের সেই কাজটি তুলে দেয়া হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। বিনিময়ে নগরবাসীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আদায় করবে তারা। এ কাজটি পাচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা। ইতোমধ্যে তাদের হাতে ১৯টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। হিসাব বলছে, এ খাতে বছরে প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্য করবে ৪১৮ কোটি টাকা।

গণ-অভ্যুত্থানের পর পরই ময়লা বাণিজ্যের সব ক্ষমতা বিএনপির নেতারা হাতিয়ে নিয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গুলশান-বনানীতে হাতবদলে ‘ময়লার মধু’ এখন বিএনপির কাছে। ময়লা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে আগে গুলশান-বনানী থেকে মাসে অন্তত ৩ কোটি টাকা আয় করতেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। শুধু বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁর বর্জ্য সংগ্রহের নামে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে অর্থ লুটপাটের একটি চক্র গড়ে উঠেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। এই চক্রে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ছিলেন। বর্জ্য সংগ্রহ বা ময়লা বাণিজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা উঠত ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান ও বনানী নিয়ে এই ওয়ার্ড। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে গুলশান ও বনানী এলাকার ময়লা বাণিজ্যে হাতবদল হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের জায়গায় এখন ময়লা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা।

প্রশ্ন হচ্ছে, বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, এই দায়িত্ব কেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে দেয়া হচ্ছে। প্রথমত, এই প্রক্রিয়াটি বেআইনি, দ্বিতীয়ত, এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ময়লা অপসারণে অনভিজ্ঞ। ফলে জনসাধারণকে ভুগতে হচ্ছে দুভাবে। একেতো বাসাবাড়ির ময়লা দ্রুত অপসারণ হচ্ছে না, দ্বিতীয়ত, একই বর্জ্য অপসারণে দুই খাতে টাকা গুনতে হচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন নগরে সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা নিয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তা বাসার সামনেই রাস্তার মোড়ে জড়ো করে রাখছে অথবা কাছাকাছি কোনো খালে-ডোবায় ফেলে দিচ্ছে তাতে পরিবেশ নোংরা হচ্ছে। মাসে এক-দুবার হয়তো সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি এসে কোনো কোনো স্থানের স্তূপকৃত ময়লা নিয়ে যায়, বেশিরভাগ সময় সেগুলো খালে-ডোবায়, খোলা জায়গায় স্তূপ হয়ে পড়ে থাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। অর্থাৎ আবাসিক এলাকার মধ্যেই পরিণত হচ্ছে ময়লার ভাগার।

নগরবাসীরা এসব নিয়ে কারও কাছে কোনো অভিযোগও করতে পারেন না, কারণ, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতারা এতোই শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না; কিন্তু এখন তো বিএনপি ক্ষমতায় নেই। তাহলে তাদের এত দৌরাত্ম্য বাড়ল কেন? গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে কতিপয় বিএনপি নেতার আচরণ দেখে এমন মনে হচ্ছে তারা যেন সব ক্ষমতা হাতে পেয়ে গেছে। শুধু ময়লা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নয়, তাদের আরও অনেক কর্মকাণ্ডেই এমনটা লক্ষ করা যাচ্ছে। যা দেখে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতারাও বিরক্ত; কিন্তু বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কেন? সরকারও কেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? ময়লা বাণিজ্য নিয়েও যদি এমন মাফিয়াচক্র শুরু হয় তাহলে দেশের অবস্থা নিয়ে আর কিছু বলার নেই। আমরা চাই সরকার অবিলম্বে এ ধরনের বেআইনি কার্যক্রম বন্ধ করুক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ