চাঁদাবাজি, খুন-সন্ত্রাস বন্ধ করুন
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার পর গত শুক্রবার (১১ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকায় চাঁদাবাজিজনিত কারণে এক রোমহর্ষক ঘটনা ঘটে গেছে। ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে একদল লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে হামলা চালায় পল্লবীর আলবিরটেক এলাকায় এ কে বিল্ডার্স নামের একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে। হামলাকারীরা এ সময় চারটি গুলি করেছে। দুর্বৃত্তদের গুলিতে শরিফুল ইসলাম নামে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে দুর্বৃত্তদের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত আতঙ্কজনক। দিন-দুপুরে একদল লোক ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দৃশ্যটি দেখে মনে হয় এ যেন সভ্য দেশের কোনো চিত্র নয়- ওয়েস্টার্ন ফিল্মের দৃশ্য।
দেশে ছিনতাই, চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ রোববার (১৩ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গতকাল শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। লাল চাঁদ হত্যাসহ সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের একের পর এক অপরাধে যুক্ত হওয়ার সমালোচনা করেন বিক্ষোভকারীরা। তারা চাঁদাবাজি, খুন-সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানান।
দেশে ছিনতাই, চাঁদাবাজি কোন মাত্রায় ছড়িয়েছে তার আরও একটি প্রমাণ গত শুক্রবার রাজধানীর শ্যামলীতে অস্ত্রের মুখে পথচারীর পোশাক-জুতাসহ সবকিছু নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও ফুটেছে দেখা যায়, ছাতা হাতে এক ব্যক্তি রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন। হঠাৎ পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন আসে। মোটরসাইকেল থেকে একজন নেমে পড়ে, বাকিরা সামনে গিয়ে পথরোধ করে। এরপর মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা আরও একজন নেমে ভুক্তভোগীকে ঘিরে ধরে। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা যায়, যেটা দিয়ে ভুক্তভোগীকে ভয় দেখানো হয়।
এই দৃশ্য দেখে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন, মানুষের পোশাকও আজ নিরাপদে নেই। কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ঘর থেকে কাপড় পরে বের হওয়া আর না হওয়া এখন সমান। পরে বের হলে কারা কোথায় খুলে নিয়ে যাবে, ঠিক নেই।’
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন দেশে আজ ছিনতাই, চাঁদাবাজির এমন দৌরাত্ম্য বেড়ে গেল? উত্তরটা এক কথায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবহেলার কারণেই এটা হচ্ছে; কিন্তু উত্তরটা আরও অনেক গভীর। ছিনতাই, চাঁদাবাজির সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার অবনতি অবশ্যই যুক্ত; তার চেয়ে বেশি যুক্ত সামাজিক অবক্ষয়। দেশে একদিকে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়ছে। সাধারণ জনগণ আজ চরম এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অনেক চাঁদাবাজির ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও জড়িত। এ নিয়ে এখন এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করছে। পরিস্থিতি যাই হোক, দেশের মানুষ যে আজ ভয়ংকর অনিরাপত্তার মধ্যে আছে সেটাই শেষ সত্য এবং এর জন্য প্রথম ও সর্বশেষ দায়ী একমাত্র সরকার। সরকার কেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?
গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে এক বছর হয়, অন্তর্বর্তী সরকারও গঠিত হয়েছে এক বছর হয়ে গেল। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে সরকার কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এর মধ্যে দেখে একরকম নৃশংস মব-ভায়োলেন্স হয়েছে। এগুলোর কোনোটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। আমরা চাই দ্রুত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হোক। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক। সরকার এ ক্ষেত্রে যত অবহেলা করবে ততই এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকবে। তা শেষ পর্যন্ত সরকারের ব্যর্থতাকেই স্পষ্ট করে তুলবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে