Views Bangladesh Logo

ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বন্ধ করুন

ঢাকা কলেজ আর সিটি কলেজ- পাশাপাশি অবস্থিত রাজধানীর এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্কটা অনেকটা যেন সাপে-নেউলের। দিন দিন তারা যেন ‘চিরশত্রু’তে রূপ নিচ্ছে। দুদিন পরপর কেন তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তা সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নাকি জানে না; কিন্তু তাদের সংঘর্ষ ধারাবাহিকভাবে চলমান যা দেশের শিক্ষার জন্য উদ্বেগজনক বিষয়।

গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি ভয়াবহ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষে পুলিশসহ দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এখন শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

দুপক্ষের মারামারিতে নিউমার্কেট এলাকা অনেক সময় রণক্ষেত্র ধারণ করে। অনেক মার্কেট ও স্কুল-কলেজ থাকার কারণে এমনিতেই ওই এলাকাটি ব্যস্ততম। মারামারি লেগে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে দক্ষিণ ঢাকার অর্ধেকটা প্রায় বিকল হয়ে যায়। এ জন্য রাজধানীবাসীরও ক্ষোভের শেষ নেই।

এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা কখন রাস্তায় নামবে, একে অপরকে দেখে গর্জে উঠবে, তারপর শুরু হবে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি- তাও কেউ জানেন না। অনেক সাধারণ মানুষ এখন ওইদিকে যেতেও ভয় পান। ফলে নিউমার্কেট, গাউছিয়াসহ উক্ত এলাকার অনেক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানেরই খুব ক্ষতি হচ্ছে।

কিন্তু এভাবে দুই পক্ষের সংঘর্ষ কি চলতেই থাকবে দিনের পর দিন? কিন্তু কোনো সমস্যা জানা থাকলে তা সমাধান করা যায়। ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সমস্যা কি তাও অনেকে জানেন না। পুলিশ প্রমাণ পেয়েছে, এই মারামারির পেছনে কোনো প্ররোচনা নেই। আছে শুধু ‘আত্মগৌরব’ নামক ভাইরাস। ওদের মারামারির কারণ খুঁজতে গেলে কেবল একটাই উত্তর মিলবে: ‘সেরা হবার নেশা’; কিন্তু এই শ্রেষ্ঠত্বের বাসনা আসলে কী কারণে?

তারা কি লেখাপড়ায় একে-অপরকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। তা তো না। জানা গেছে, দুটি কলেজেই লেখাপড়ার অবনতি ঘটছে। তাদের আত্মগরিমার কোনো নির্দিষ্ট কারণও নেই। এটা যেন চলমান ‘মব’-এরই এক প্ররোচনা; কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি ধ্বংস হয়ে যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ কলেজ দুটির শিক্ষকদের এখনই এই সংঘর্ষ বন্ধের চিরস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কলেজ দুটিতে যথাযথ লেখাপড়ার পরিবেশ ও সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা ফিরিয়ে না আনলে এসব চলতেই থাকবে।

আত্মগৌরবের এই ভাইরাস আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়বে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। একসময় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনা চলত লেখাপড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আর এখন আধিপত্য বিস্তার করতে চায় মারামারি করে যা আমাদের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক অবক্ষয়কেই চিহ্নিত করে। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাও হয়তো এর জন্য অনেকটা দায়ী। এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকেই কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হয়। পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল-পরিবার সবারই ভূমিকা আছে শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে চালিত করার।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ