ঘুষ বন্ধ করুন
সম্প্রতি রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বোমা ফাটালেন। এক ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, “এক বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা হলো। তিনি বলছেন, ‘আগে ঘুষ দিতাম এক লাখ টাকা, এখন দিই পাঁচ লাখ টাকা।’ আমি জানি না এটাকে কীভাবে দেখবেন।”
বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, ঘুষ যেন এ জাতির এক অনিবার্য নিয়তি। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। ঘুষ বন্ধের কথা বিভিন্ন সরকারের আমলেই আমরা শুনেছি; কিন্তু ঘুষ বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে। বেড়েছে যে তার প্রমাণ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথাতেই স্পষ্ট প্রমাণিত।
কিন্তু ঘুষ দেয় কে? আর নেয় কে? আমরা জানি ঘুষ যে দেয় আর যে নেয় উভয় পক্ষই সমান অপরাধী। সাধারণত সরকারি অফিসেই ঘুষ দেয়া-নেয়া বেশি চলে। ঘুষ ছাড়া কেউ কোনো কাজ করতে পারে না। এখন ঘুষ যে দেয় তার দোষ অবশ্যই আছে; কিন্তু ঘুষ ছাড়া কাজ না করতে পারলে সে করবে কী? ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবে?
ঘুষের কারণে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আস্থা পায়নি। আমরা ভেবেছিলাম গণ-অভ্যুত্থানের পর এ ধরনের সামাজিক অপরাধ কমবে; কিন্তু দেখলাম উল্টো। প্রশাসন, ক্ষমতাবানদের অনেকেই ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত এমন খবর এখন হরহামেশাই প্রকাশ হচ্ছে। তার সঙ্গে বেড়েছে চাঁদাবাজি।
এত সংস্কার কমিশন গঠিত হলো, রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে আমরা এত কথা শুনলাম গত এক বছরে, এই তার পরিণতি! যে পুলিশ বিগত আওয়ামী লীগের সময় নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল, গণ-অভ্যুত্থানের পর তারা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে- তারা এখনো ঘুষের সঙ্গে জড়িত থাকে কী করে?
তার মানে বর্তমান সরকার আসলে প্রশাসনিক কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ। সরকারের আরও অনেক ব্যর্থতাই এর মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে, এখন ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি বড় করে সামনে আসছে; কিন্তু এ থেকে মুক্তির উপায় কী? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুরোনো কথাই বললেন, ‘রাতারাতি সবকিছু বদলে ফেলতে পারব না। আবার তাই বলে, দীর্ঘকালের জন্য গণতান্ত্রিক চর্চাটাকে বাদ দিয়ে এটাকে ঠিক করার জন্য কাজ করতে থাকব, এটাও ঠিক না। এ জন্য অতি দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে সংস্কার করতে হবে।’
তার মানে তিনি নির্বাচনের কথাই বলছেন; কিন্তু নির্বাচন হলে, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলেই যে সব বদলে যাবে, ঘুষ বন্ধ হয়ে যাবে তার বিষয়েও আমরা সন্দিহান। বাংলাদেশের জনগণের অবস্থা হয়েছে এখন ঘরপোড়া গরুর মতো, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। তারপরও আমরা আশা রাখতে চাই, বর্তমান সরকারই ঘুষ বন্ধের বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। আমরা চাই ঘুষ বন্ধের বিষয়ে সরকার আরও কঠোর হোক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে