আদালত প্রাঙ্গণে হামলা বন্ধ করুন
বিচারিক আদালতের সামনে কীভাবে গণপিটুনির সম্মুখীন হতে পারেন একজন অভিযুক্ত আসামি? তাহলে আর আইন-আদালত আছে কী জন্য! সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীকে মারধরের চেষ্টা হয়েছে। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এর আগে সাবেক চারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়। আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করা হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের অবসান হয়েছে। এরপর এ পর্যন্ত শেখ হাসিনার একজন উপদেষ্টা, তিনজন সাবেক মন্ত্রী, দুজন প্রতিমন্ত্রী, সংসদের ডেপুটি স্পিকার, একজন উপমন্ত্রী এবং তিনজন এমপিসহ অনেক নাগরিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেতাদের পাশাপাশি গ্রেপ্তার হয়েছেন দুজন সাংবাদিক।
আটক হওয়া নেতাদের আদালতে তুলে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে বা কারাগারে পাঠানো হচ্ছে; কিন্তু আদালতে নেয়ার কিংবা বের করার সময় আদালত প্রাঙ্গণেই পুলিশের নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে শারীরিক হামলার শিকার হয়েছেন কয়েকজন।
এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যস্ত করেছেন দেশের সাধারণ মানুষ। এক জরিপে উঠে এসেছে, আদালত প্রাঙ্গণে আসামির ওপর হামলা ৮৭% মানুষ সমর্থন করেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলও সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে যাওয়ার সময় কখনো কাউকে আক্রমণ করা উচিত নয়, এটি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
এমন ঘটনা যাতে না হয়, সে বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল ও চিন্তাভাবনা করছেন বলেও জানান এই উপদেষ্টা; কিন্তু কেন বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে? এটা কি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা, মব জাস্টিস, মব লিঞ্চিং-এর প্রবণতা না কি এর পেছনে অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে?
ধরে নেয়া যাক আসামিরা জঘন্য অপরাধী, ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী, তাই বলে তাদের আদালত প্রাঙ্গণে হেনস্থা কেন? তাদের তো আদালতে নিয়েই যাওয়া হয়েছে বিচারের জন্য। বিচার হবে আইনি-প্রক্রিয়ায়। আদালতের রায়ের আগেই কেন তাদের ওপর গণবিচার। এতে করে তো তাদের দিকে উল্টো জনসমর্থন চলে যাচ্ছে। বিপরীতে যারা বিচারের দাবি তুলছেন তারাই অপরাধী হচ্ছেন। কেন তাহলে এমন বিচারবহির্ভূত কাজ?
‘আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না’, এমন একটা সংলাপ বাংলা চলচ্চিত্রে প্রায়ই শোনা যায়; কিন্তু এখন আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতাই দেখা যাচ্ছে বেশি। এটা যেভাবেই ঠেকাতে হবে। তা নাহলে কিন্তু বিচারিক আদালত ব্যর্থ হয়ে যাবে। যত বড় অপরাধীই হোক আদালতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তিনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বোধ করবেন, এটাই সভ্য-সমাজের আইন-আদালতের ভিত্তি। এর ব্যত্যয় হলে কেবল আইন-আদালত না, পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। তাই আমরা চাই, আদালত প্রাঙ্গণে যেমন নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা দরকার, তেমনি জনসাধারণেরও বিবেক জাগ্রত হোক- এটাই প্রত্যাশা সবার।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে