Views Bangladesh Logo

ঢাকার ‘ফুসফুসে’ আঘাত বন্ধ করুন

রাজধানী ঢাকার একেবারে কেন্দ্রস্থলে এই এক টুকরো সবুজ- ‘ওসমানী উদ্যান’, যাকে বলা হয় ‘ঢাকার ফুসফুস’; কারণ, আশপাশের অসংখ্য আকাশছোঁয়া দালানকোঠার ভিড়ে এটুকু সবুজই এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সেই ফুসফুসেও আঘাত চলছে, চলছে উন্নয়নের প্রকল্পের কাজ।

আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিল ওসমানী উদ্যানে যা এখনো অসমাপ্ত। ফলে উদ্যানটি পরিণত হয়েছে কংক্রিটের জঞ্জালে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করবে। এতে ব্যয় হবে ৪৬ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওসমানী উদ্যানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে এর নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। নকশা চূড়ান্ত হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা বা ব্যক্তিকে স্মরণে রাখার জন্য বড় সব পার্কেই বিভিন্ন স্থাপনা আছে। যেমন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্লাস টাওয়ার ও স্বাধীনতা জাদুঘর, জিয়া উদ্যান বা চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাধি ও মিনার আছে।’

স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষিত থাকে; কিন্তু স্মৃতিস্তম্ভ কোথায় নির্মাণ করলে প্রকৃতির ক্ষতি হবে না তা অবশ্যই সরকারকে ভাবতে হবে। বিভিন্ন পার্কে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ নিয়ে আগেও সমালোচনা হয়েছে। আগেও হয়েছে বলে এখনো হতে হবে- এটা কোনো যুক্তির কথা না। ঢাকা শহর আগের চেয়ে এখন বহুগুণ বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। বিশেষ করে এই ওসমানী উদ্যানের আশপাশে যারা থাকেন, পুরান ঢাকার মানুষের শ্বাস নেয়ার কোনো জায়গা নেই। একটু প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য অনেকেই নিয়মিত এই পার্কটিতে আসেন। স্থাপনা নির্মাণের ফলে পার্কটির যে স্থায়ী হবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। যেখানে পার্কে ৫ শতাংশ স্থানজুড়ে অবকাঠামো তৈরি করা যায়, ওসমানী উদ্যানে এরই মধ্যে তার চেয়ে বেশি অংশজুড়ে অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। ফলে তাদের আশঙ্কা, নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করলে উদ্যানের অবশিষ্ট অংশটুকুও হারিয়ে যাবে।

এই পার্কের উন্নয়নকাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে সাতত্ত্ব। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার স্থপতি রফিক আজম স্মৃতিস্তম্ভ না করে উদ্যানের ভেতরে নির্মিতব্য একটি ভবনে জুলাই-আগস্টের স্মৃতি সংরক্ষণে জাদুঘর করার পরামর্শ দিয়েছেন। রফিক আজম বলেন, পার্কের পশ্চিম পাশে নির্মিত অর্ধেক মাটির নিচে থাকা ভবনে একটি নগর জাদুঘর হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ হলেও অর্থসংকটের কারণে সেই জায়গা ফাঁকা আছে। সরকার চাইলে সেখানে বড় পরিসরে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের জাদুঘর করতে পারে।

তাতে নাকি অর্থও বাঁচবে, গাছও বাঁচবে, জায়গাও বাঁচবে। আমরা চাই সরকার রফিক আজম ও পরিবেশবাদী এবং ঢাকার নাগরিকদের কথা আমলে নিক। সরকারকে মনে রাখতে হবে, স্মৃতিস্তম্ভ অন্য জায়গায় নির্মাণ করা যাবে; কিন্তু ঢাকার ফুসফুসে একবার ক্ষতি হলে সেই ক্ষতি আর সারিয়ে তোলা যাবে না। তাই অবিলম্বে ঢাকার ফুসফুসে আঘাত বন্ধ করুন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ