পাথর উদ্ধার করা যাচ্ছে, লুটপাট ঠেকানো গেল না কেন?
সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর লুট হয়ে যাওয়ার পর সারা দেশে হৈচৈ পড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। এটা শুধু দেশের সরকারি সম্পদ লুট হয়ে যাওয়ার কারণে নয় নিশ্চয়ই, দেশের সৌন্দর্য চুরি হয়ে যাওয়ার কারণেও অনেকটা। অসংখ্য পর্যটক ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর দেখতে গেছেন। সিলেটে যারাই ঘুরতে যান, যে দুচারটা স্থান অবশ্যই পরিদর্শন করেন তার মধ্যে সাদা পাথর একটি। যারা এর আগে ভোলাগঞ্জ ঘুরে এসেছেন, ছবি তুলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে সব ছবি আপলোড করে লিখেছেন- এসব এখন শুধুই স্মৃতি! মানুষের সম্পদ লুট করে নিলেও হয়তো এতটা আহত হয় না যতটা স্মৃতি লুট করে নিলে হয়। আজকের বাংলাদেশে সবই লুট হয়ে যাচ্ছে- সম্পদ, সৌন্দর্য ও স্মৃতি!
আশার কথা হচ্ছে, লুট হওয়া পাথর ফিরতে শুরু করেছে। যারা দিন-দুপুরে পাথর লুট করেছে তারা না কি এখন প্রশাসনের ভয়ে রাতের আঁধারে পাথর রেখে যাচ্ছে! গতকাল (১৩ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, যৌথবাহিনীর রাতভর অভিযানে ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা গেছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) রাত ১২টার পর থেকে এই অভিযান শুরু হয়। জাফলং, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন সড়কেও রাতভর অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। বিভিন্ন সড়কে একের পর এক পাথর বোঝাই ট্রাক থামিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি চালক ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পাথরের উৎস যাচাই করা হয়। উদ্ধারকৃত পাথরগুলো পুনরায় নদীতে ফেলে দেয়া হচ্ছে।
যদিও লুট হওয়ার তুলনায় উদ্ধারকৃত পাথর এখনো অপ্রতুল; কিন্তু সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চুরি হওয়া সব পাথর ফেরত না আসা পর্যন্ত অভিযান চলবে। পাশাপাশি, পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাহলে প্রশ্ন থেকে গেল, লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করা গেলে লুট ঠেকানো গেল না কেন? চার মাস ধরে লুট করা হয়েছে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রের পাথর। এই লুটের কথা সবাই জানত। কারণ, দিন-দুপুরে চলেছে লুটপাট। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে; কিন্তু তা জোরালো ছিল না। ফলে পাথর লুট ঠেকানো যায়নি। জানা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুট করা হয়েছে। এই লুটপাটে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কারণ, পাথর উত্তোলন, পরিবহন, মজুত, ভাঙা ও বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্য সচিব আবদুল করিম চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পাথর লুট ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এর সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে জড়িত রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
বিএনপি-জামায়াতের নেতারা তো এখনো ক্ষমতায় যাননি তাহলে এত দৌরাত্ম্য তারা কোন শক্তিতে দেখান? ক্ষমতায় গেলে তারা আরও কী করবেন তাও জনগণ এখন বুঝতে পারছেন। আমরা চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ আরও বাড়বে। লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেয়া হোক সেটাই আমরা চাই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে