Views Bangladesh Logo

বিমান দুর্ঘটনায় আহত শিশুদের ট্রমা দূর করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি

রাজধানীর দিয়াবাড়ি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান আছড়ে পড়ে ৩২ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহতের ঘটনায় পুরো জাতিই একপ্রকার ট্রমায় আক্রান্ত হয়েছে। দুদিন ধরে অনেকেই ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন। অনেক শিশু বিমান উড়ে যাবার শব্দ শুনলেই ভয় পাচ্ছে বলেও জানা গেছে। এ অবস্থায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা ভাবুন। যারা চোখের সামনে এরকম ভয়াবহ একটি দুর্ঘটনা দেখেছে। দেখেছে প্রিয় বন্ধুদের মৃত্যু। শুধু আহতরাই না, যারা কোনো আঘাত না পেয়ে শারীরিকভাবে সুস্থ আছে, ঘটনা থেকে দূরে ছিল, কিন্তু ওই স্কুলেরই শিক্ষার্থী তাদেরও মানসিক দিকটা সহজেই বোঝা যায়।

এরকম অবস্থায় উক্ত স্কুলের শিক্ষার্থীদের ট্রমা দূর করতে পরিবারের বাড়তি যত্ন যতটা প্রয়োজন, তাদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখার জন্য রাষ্ট্রেরও জরুরি উদ্যোগ দরকার। এ নিয়ে মনোবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামালও এক প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে জানিয়েছেন তার অভিমত। তিনি লিখেছেন, ‘যারা নিহত হয়েছে তাদের মা-বাবাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই। সন্তান হারানোর এই বেদনা তাদের আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। যেসব শিশু আগুনে পোড়া ক্ষত ছোট্ট শরীর নিয়ে হাসপাতালের বেড়ে কাতরাচ্ছে- শরীরের পাশাপাশি তাদের মনোজগতে তৈরি হয়েছে বিরাট ক্ষত।

আহত অনেকেই হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে; কিন্তু মানসিক ট্রমা থেকে যাবে অনেক দিন।’ একটা বিমান স্কুলের ছাদে ও প্রাঙ্গণে এসে আছড়ে পড়েছে, একবার ভাবুন তার ভয়ংকর শব্দের কথা! ক্লাসরুমে থাকা অনেকে বুঝতেই পারেনি এটা কীসের শব্দ! আহত অনেকে বলেছে তারা প্রথমে ভেবেছে এটা বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। তারপর আগুন! মুহূর্তে মৃত্যুর মুখোমুখি কয়েকটি শিশু!

১৯৮৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সেরিটোসে মাঝ আকাশে দুটি বিমান সংঘর্ষে পর আবাসিক এলাকায় আছড়ে পড়েছিল, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৮২ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে দুটি বিমানের সব যাত্রী, ক্রুসহ দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের আবাসিক এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা ছিলেন। কাছাকাছির কয়েকটি স্কুল থাকলেও ভাগ্য ভালো বিমান দুটোর ধ্বংসাবশেষ কোনো স্কুলে সরাসরি ধাক্কা খায়নি। তবে কাছাকাছি স্কুলগুলোর শ্রেণিকক্ষে ধোঁয়া ও ধ্বংসাবশেষ প্রবেশ করেছিল। কিছু শিশু শিক্ষার্থী ওই মুহূর্তে বাইরে খেলছিল বা জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিল। তারা পুরো ঘটনাটি চোখের সামনে দেখেছে। এদের অনেকেই পরবর্তীতে ট্রমার শিকার হয়। দুর্ঘটনা চোখের সামনে দেখেই তারা যে পরিমাণ ট্রমার শিকার হয়েছিল, যার কারণে তাদের পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হয়।

এবার ভাবুন আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের কথা। যারা এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সরাসরি শিকার হয়েছে, যারা চোখের সামনে প্রিয় বন্ধুদের আগুনে পুড়ে মারা যেতে দেখেছে তাদের কী অবস্থা হবে! এখন রাষ্ট্র তাদের মানসিক ট্রমা কাটাতে কী উদ্যোগ নেয় সেটাই দেখার বিষয়। দুঃখের বিষয়, এত বড় দুর্ঘটনার পরও পরদিন স্কুল বন্ধ থাকল না! অথচ শোক দিবস পালন করা হলো!

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ