শ্রীলঙ্কায় স্টারলিংক এবং আইনি বাধ্যবাধকতা
শ্রীলঙ্কা ২০২৪ সালে টেলিযোগাযোগ আইনের ১৭ ধারার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংককে লাইসেন্স দেয়। এ ক্ষেত্রে লাইসেন্সের শর্তাগুলো লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই নির্ধারণ করা হয়।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে লাইসেন্স হলো এমন একটি আইনি দলিল যা লাইসেন্সধারী এবং লাইসেন্সদাতা উভয়ের অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে। সব ক্ষেত্রেই এসব লাইসেন্সের শর্তাবলিতে জনস্বার্থের প্রতিফলন ঘটে এবং জনস্বার্থবিরোধী যে কোনো পদক্ষেপের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেই লাইসেন্সধারীর প্রতি বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘনের পরিণতি কী হবে সেটাও সেখানে নির্ধারণ করা থাকে।
এই আইনি দলিল নিশ্চয়তা দিয়ে এবং বিনিয়োগের ঝুঁকি হ্রাস করে লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বা সেবা প্রদানকারী সংস্থাকে একটা সুবিধা দেয়। একই সঙ্গে লাইসেন্স সংশোধন, নবায়ন করার ক্ষেত্রেও শর্ত যুক্ত করে। একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের আইন প্রয়োগের ক্ষমতাকে সংজ্ঞায়িত করে এবং সেই পদক্ষেপগুলো কী পদ্ধতিতে নেয়া হবে সেটাও নির্ধারণ করা হয়। আবার লাইসেন্সের এসব শর্তাবলিতে সংশোধন আনতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। কেননা, একতরফা সংশোধন বিনিয়োগকারীর মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করে যার ফলে ভুল নির্দেশনা পাওয়ার মতো বিষয়ও থাকে।
শ্রীলঙ্কায় স্টারলিংকের ক্ষেত্রে সংবাদ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে স্টারলিংককে দেয়া লাইসেন্সে আইনানুগ বাধ্যবাধকতার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে লাইসেন্সটির শর্তাবলি (যা টিআরসি ওয়েবসাইটে থাকা উচিত ছিল; কিন্তু নেই) না পড়েই আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না। তবে, শ্রীলঙ্কায় এসব ক্ষেত্রে সাধারণত যেটা দেয়া যায়, সেটা হলো লাইসেন্সগুলোতে আইনানুগ বাধ্যবাধকতামূলক শর্ত অন্তর্ভুক্ত করার কোনো ধারাবাহিক অনুশীলন নেই। এসএলটি লাইসেন্সে আইনগত বাধ্যতামূলক একটি শর্ত (১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে জারি করা মূল লাইসেন্সে অন্তর্ভুক্ত নয়) অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সেটা মোবিটেলের ক্ষেত্রে নেই, যদিও উভয় লাইসেন্সই ২০২৩ সালে জারি করা হয়েছিল।
তবে, স্টারলিংক একটি অনন্য সেবা। এক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিতে আগের কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনা করা যাবে না যদিও স্টারলিংকের প্রকৃতি কিছুটা মোবিটেলের মতো। তাই এক্ষেত্রে স্টারলিংককে আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে ফেলতে হলে ‘লাইসেন্স সংশোধন নাটকের’ মধ্যে না গিয়ে, সরকার আলোচনার মাধ্যমেই কাঙ্ক্ষিত সেবা আরও ভালোভাবে পেতে পারে।
যখন এক্সচেঞ্জ বা গেটওয়ে একটি দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত থাকে তখন নির্দিষ্ট যোগাযোগ রেকর্ড করার জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনস্টল করা এবং আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে সেই রেকর্ডগুলো সরবরাহ করা সম্ভব (আইনানুগ বাধ্যবাধকতা অর্থে) যার ফলে গ্রাহকরা নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষার যে প্রত্যাশা রাখেন সেটা গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করা হয়। শ্রীলঙ্কার টেলিকম আইন এবং অন্যান্য আইনে (বর্ণিত পরিস্থিতি ব্যতীত) অপারেটরদের গোপনীয়তা এবং বিশ্বস্ততা বজায় রাখার জন্য যে শর্তাবলি প্রয়োজন তা সব ধরনের লাইসেন্সে (সম্ভবত স্টারলিংক লাইসেন্সেও) উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কোনো ব্যতিক্রম হলে, আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদালতের আদেশ প্রয়োজন।
স্টারলিংকের ক্ষেত্রে, এই এক্সচেঞ্জ বা গেটওয়ে শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত নয়। এক্ষেত্রে সম্ভবত একাধিক দেশ থেকে আসা বার্তাগুলোকে একসঙ্গেই প্রসেস করা হয় যার ফলে আইনি বাধ্যতামূলক সফটওয়্যার ইনস্টলেশন কিছুটা জটিল হবে।
শ্রীলঙ্কার চেয়ে বড় এবং লাভজনক বাজার ভারতেও স্টারলিংককে ব্যবসা করার অনুমোদন দেয়ার আগে নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। যেহেতু ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ বেশি, বিষয়টি নিয়ে সেখানে তাই বিস্তর আলোচনা চলছে (https://www.newindianexpress.com/business/2025/Mar/16/starlinks-india-debut-the-back-story)।
এখানে, বিষয়গুলো হলো “শুধুমাত্র অনুমোদিত সেবার জন্য স্যাটেলাইট ব্যবহার করা এবং অনুরোধ করা হলে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে কল ডেটা রেকর্ড সরবরাহ করা। প্রতিষ্ঠানটিকে ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর একটি বাফার জোনও স্থাপন করতে হবে এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন ভারতের ভেতরে উৎপন্ন বা বন্ধ হওয়া সব ফোন কল দেশের মধ্যে একটি GMPCS গেটওয়ের মধ্য দিয়ে যায়।”
(একবার দেশের অভ্যন্তরে নির্দিষ্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে ফোন কলের বিস্তারিত রেকর্ড সরবরাহের বাইরেও যাওয়া সম্ভব হতে পারে। Once an India-specific gateway is established within the country, it may be possible to go beyond the supply of call-detail records to security agencies.)
তবে শ্রীলঙ্কা একটি খুব ছোট বাজার হওয়ায়, টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন এবং ভারতের কর্তৃপক্ষের মতো লিভারেজ থাকার সম্ভাবনা কম। বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় শ্রীলঙ্কা এগিয়ে যাচ্ছে তার চূড়ান্ত ফলাফল হতে পারে শ্রীলঙ্কা থেকে স্টারলিংক সেবা প্রত্যাহার করা এবং/অথবা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকা।
রোহান সামারাজিবা: চেয়ারম্যান, লার্ন এশিয়া (আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা সংস্থা)
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে