১০ বছর পর শাহরুখ, আমীর ও সালমান- তিন খান একসঙ্গে
সৌদি আরবের রিয়াদে ৩ দিন আগে জয় ফোরাম ২০২৫ ইভেন্টে বলিউডের তিন সুপারস্টার শাহরুখ খান, সালমান খান ও আমির খান একত্রিত হয়েছিলেন। তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাযান। রজত শর্মার অনুষ্ঠানে একসঙ্গে উপস্থিত হওয়ার প্রায় ১০ বছর পর কোনো পাবলিক অনুষ্ঠানে এই তিন তারকা একসঙ্গে উপস্থিত হলেন। সিনেমা নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন তারা। ভিউজ বাংলাদেশ-এর পাঠকের জন্য এই সাক্ষাতের ঈষৎ সংক্ষিপ্ত রূপ তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা দীপংকর দীপন।
রাযান: আপনাদের স্বাগত। আপনারা মঞ্চে এসে একটা আলাদা এনার্জি এনে দিয়েছেন। আমি জানতে চাচ্ছিলাম, অভিনেতাদের মধ্যে সেই “it factor” টা কী? যেটা দেখেই বোঝা যায়, ‘এই মানুষটা তারকা হবে।’
শাহরুখ খান: আমার অভিজ্ঞতায় বলি, “it factor” বলে কিছু নেই। এটা একেবারেই অবাস্তব কথা। “it factor” আসলে নির্ভর করে দর্শকের ওপর- ওরা কেমনভাবে তোমার উপস্থিতি, কথা, হাঁটা, চেহারা- সবকিছু গ্রহণ করে। আমরা নিজেরাও জানি না, কেন দর্শক আমাদের ভালোবাসে।
সালমান খান: আমি জানি, কারণ... (আকাশের দিকে আঙুল তুলে)
শাহরুখ খান: হ্যাঁ, আল্লাহই আমাদের তারকা বানান। ঈশ্বরের দয়া।
সালমান খান: আসলে আমরা কেউই নিজেদের “স্টার” ভাবি না। সাংবাদিকরাই এসব ট্যাগ দেয়। ঘরে আমরা একদম সাধারণ মানুষ। আমি এখনো বাবার বকুনি খাই, মা এখনো বকেন, ভাইবোনরাও বকাঝকা করে। আমরা সাধারণই। আমাদের সিনেমায় যে দেবতার মতো উপস্থাপন করা হয়, সেটা পরিচালক, লেখক, চিত্রগ্রাহক আর দর্শকদের কৃতিত্ব। আমরা নই, ওরাই আমাদের বড় করে তোলে।
রাযান: তাহলে আপনারা সফলতার কৃতিত্ব কাকে দেবেন?
সালমান খান: সফলতা নির্ভর করে শুক্রবারের ওপর! সিনেমা রিলিজ হয়, যদি হিট হয়- আমরা খুশি। না হলে, প্রতিযোগীরা খুশি। (হাসি)
রাযান: এখন যখন সবকিছু বদলে যাচ্ছে, নতুন প্রজন্ম আসছে, তখন কীভাবে আপনারা নিজেদের কাজের ধরণ পরিবর্তন করেন যাতে পুরোনো ভক্তরাও সংযোগ বোধ করে আর নতুন প্রজন্মও টান অনুভব করে?
শাহরুখ খান: শেষ পর্যন্ত সবই নির্ভর করে গল্পের আবেগের ওপর- content এর ওপর। আমাদের সিনেমাগুলোতে একটা emotional connect আছে। হয়তো সংস্কৃতি বা পরিবারের আবেগের জন্যই দর্শক সেটা অনুভব করে। ভারত বা সৌদি- যেখানেই হোক, গল্পে সেই আত্মিক সংযোগটাই দর্শককে ছুঁয়ে যায়। আমরা ধনী চরিত্র হই বা গরিব, ভালো বা খারাপ মানুষ- এই আবেগই সীমা ছাড়িয়ে যায়, ভাষা বা মাধ্যমের গণ্ডি পেরিয়ে। সেটা সিনেমা হল, মোবাইল বা OTT যেখানেই হোক না কেন, এই গল্প বলার আবেগই আমাদের একত্রে বেঁধে রাখে।
আমির খান: আমার মনে হয়, আমরা সবাই ভাগ্যবান যে ভারতে জন্মেছি, হিন্দি সিনেমার অংশ হতে পেরেছি। অন্য কোথাও জন্মালে হয়তো এই সুযোগ পেতাম না। তাই এটা অনেকটাই সময়, স্থান আর ভাগ্যের ব্যাপার। সবাই পরিশ্রম করে, কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়।
রাযান: আচ্ছা, স্টারডম বা খ্যাতির সঙ্গে আপনাদের সম্পর্কটা কেমন? কারণ এটা অনেক সময় মানুষকে গ্রাস করে ফেলে, আবার অনেক সময় এটা আপনাকে অনুপ্রাণিতও করে। আমরা সবাই মানুষ- কখনো ভালো দিন যায়, কখনো খারাপ। এখন এত বিশাল দর্শকগোষ্ঠী, সোশ্যাল মিডিয়ায় এত উপস্থিতি- এতে মানসিকভাবে কেমন প্রভাব পড়ে? এটা আত্মাকে তৃপ্ত করে , নাকি কখনো কখনো ক্লান্ত করে ফেলে?
আমির খান: হ্যাঁ, এটা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। সারাক্ষণ জনসমক্ষে থাকা সহজ না। আমি একা থাকতে পছন্দ করি, আলোর কেন্দ্রে আসতে ভালো লাগে না। আমি অনেকটা ইনট্রোভার্ট। তাই অনেকভাবে অস্বস্তিকর লাগে, কিন্তু আমরা প্রত্যেকে আমাদের মতো করে সামলাই।
শাহরুখ খান: আমি সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব অস্বীকার করছি না, কিন্তু একটা বিষয় আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- যখন তুমি সারাক্ষণ আলোচনায় বা জনসমক্ষে থাকো, তখন নিজের বিশ্বাসটাকে অটুট রাখতে হয়। গল্প বলা বা সৃজনশীল কাজের মূল হলো “বিশ্বাস”। তুমি যদি বিশ্বাস করো- “আমি যা করছি, তা ভালো হবে”- তাহলে বাইরের কথাগুলো কোনো গুরুত্ব পায় না। তোমাকে যেন ঘোড়ার চোখের মতো সামনে তাকিয়ে থাকতে হয়, চারপাশের আওয়াজ ভুলে যেতে হয়। কারণ এই পৃথিবীতে এখন সবসময় আওয়াজ- “ওকে এভাবে পোশাক পরা উচিত”, “ওর সিনেমা এমন হওয়া উচিত”। এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিন মানুষ বলে দেয় আমাদের পরের সিনেমাটা কী হবে, কার সঙ্গে কাজ করা উচিত, কে পরিচালক হবেন; কিন্তু তোমাকে শুধু গল্পে বিশ্বাস রাখতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, তোমার শুধু সেই গল্প নিয়েই ভাবা উচিত। এই ৩৫ বছর আমরা এভাবেই কাজ করেছি। হয়তো কথাটা সহজ শোনাচ্ছে, কিন্তু যেসব তরুণ এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড়ে ঘেরা, তাদের জন্য এটা কঠিন। তবু অভিজ্ঞতা থেকে একটা কথা- আমির যেমন বলল, ও ইনট্রোভার্ট; সালমানকেও আমি জানি, ও-ও ব্যক্তিগতভাবে আলোচনায় থাকতে চায় না; আমিও আসলে লাজুক। আমরা তিনজনই এমন মানুষ যারা সারাক্ষণ জনসমক্ষে থাকতে চাই না। এটা কাজের অংশ বলেই করি, কিন্তু কেউই এটা গুরুত্বের সঙ্গে নিই না। আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাজটা।
সালমান খান: ও ঘর থেকে বেরোয় না, আমি-ও না। শুধু যখন শুটিং থাকে তখনই বাইরে যাই। একবার আমি প্রায় ১৩–১৪ বছর বয়সে Enter the Dragon দেখতে গিয়েছিলাম। বের হয়ে নিজেকে ব্রুস লি ভাবলাম- আর ফলাফল হলো মার খেলাম! কিন্তু তখনই একটা জিনিস বুঝেছিলাম- যখন কেউ সিনেমা দেখে হল থেকে বেরোয়, তার মনে এমন কিছু থাকা উচিত যাতে সে ভাবে, “আমার ছেলেটা এমন হোক”, “আমার ভাইটা এমন হোক”, “আমার স্বামীটা এমন হোক”। মানুষ যেন অন্তত ২০–২৫% ভালো হয়ে বাড়ি ফেরে।
রাযান: কিন্তু এত মানুষ যখন আপনাদের মতো হতে চায়, তখন কি নিজেকে পুরোপুরি খাঁটি রাখা কঠিন হয়ে পড়ে না? কারণ আমরা সবাই মানুষ, দুর্বলতাও তো আছে।
সালমান খান: সাফল্যই আসলে সবচেয়ে বেশি ব্যর্থতা তৈরি করে। যখন তুমি ব্যর্থ হও, তখন তুমি নতুন করে উঠে দাঁড়াও, আরও কঠিন পরিশ্রম করো; কিন্তু সাফল্য মাথায় উঠে গেলে, তখন বার্ধক্যটা ভীষণ কষ্টের হয়। তাই কখনোই সাফল্য মাথায় তুলতে নেই। ব্যর্থতার দায় তুমি নিতে পারো, কারণ সিনেমাটা তুমি সই করেছিলে, কাজ করেছিলে- কিন্তু সাফল্যের কৃতিত্ব তোমার না, সেটা সবার।
রাযান: দারুণ বলেছেন। আসলে অভিনয় মানে তো অন্যদের সঙ্গে এনার্জি শক্তি বিনিময় করা। এত বিশাল ভক্তগোষ্ঠী, চারপাশে মানুষ- এ অবস্থায় নিজেকে কীভাবে রিচার্জ করেন? মানসিক ভারসাম্যটা রাখেন কীভাবে?
শাহরুখ খান: স্টার হয়ে গেলে মানুষ তোমার কাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট আচরণ আশা করে, কিন্তু সত্যিকারের স্টারডম মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। আমরা কৃতজ্ঞ হয়ে যাই দর্শকদের প্রতি, যারা এত ভালোবাসে, এটা এক ধরনের ইতিবাচক শক্তি। আমরা কেবল সেই শক্তিটাই ফিরিয়ে দিতে চাই। ৩৫ বছর ধরে তারা আমাদের পাশে আছে, আমরা কাজ করি এই ভাবনায় যে, দর্শক সিনেমা দেখে যেন খুশি হয়ে ফিরুক, যেমন সালমান বলল- যেন ভালো মানুষ হয়ে ফিরে যায়। তাই প্রতিটা সংলাপ, প্রতিটা অঙ্গভঙ্গি আমরা করি এই ভেবে- দর্শক যেন আনন্দ পায়।
রাযান: হ্যাঁ, আর এত কিছুর মধ্যে প্রতিদিন অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পান? কীভাবে নিজেকে নতুন করে জ্বালান?
শাহরুখ খান: আমি অনুপ্রেরণা পাই আমার সন্তানদের থেকে। বাচ্চারা আমাকে নতুন শক্তি দেয়। ওদের ভাবনা, ওদের দৃষ্টিভঙ্গি- সবকিছুতেই আমি উৎসাহ পাই।
আমির খান: আমার অনুপ্রেরণা আসে বই থেকে। ছোটবেলা থেকেই পড়তে ভালোবাসি। ভালো কোনো বই পড়লে নতুন চরিত্র, নতুন ভাবনা পাই- এটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
সালমান খান: আসলে আমাদের পরিবারই আমাদের মাটিতে রাখে। আমরা জানি, যতক্ষণ না প্রাণপণ পরিশ্রম করি- রক্ত-ঘাম এক করে কাজ দিই- ততক্ষণ দর্শক খুশি হবে না। তারা সময় ও টাকা ব্যয় করে সিনেমা দেখতে আসে, তাই আমাদের সেরাটা দিতে হয়। আমরা কেউই জন্মসূত্রে কেউ না, শূন্য থেকে শুরু করে আজকের জায়গায় এসেছি, আর বহুবার ব্যর্থতাও দেখেছি। সেই ব্যর্থতাই আমাদের শিখিয়েছে- সবকিছু ক্ষণস্থায়ী, তাই মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়, ভারসাম্য রাখতে হয়।
রাযান: এখন সৌদি আরব এমন এক কেন্দ্র হয়ে উঠছে যেখানে সারা বিশ্বের মানুষ প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে আসছে। বলিউড এবং সৌদি আরবের মধ্যে সেই সংযোগ বা সহযোগিতা তৈরি হতে পারে? আপনাদের দৃষ্টিতে সেটা কেমন হতে পারে?
শাহরুখ খান: আমি মনে করি,- আমাদের সংস্কৃতিতে, পারিবারিক মূল্যবোধে, এমনকি ঈশ্বর বিশ্বাসেও অনেক মিল আছে। এই মিলগুলোই ভারত আর সৌদির মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। আসলে, যদি আরও বড় পরিসরে দেখি, তাহলে দেখা যায় পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এই তিনটি মৌলিক বিষয়েই বিশ্বাস করে। আমার মনে হয়, সৌদি আরব এখন এমন একটি জায়গা তৈরি করছে যেখানে পশ্চিম থেকে মানুষ আসছে, পূর্ব থেকেও আসছে- সবাই মিলিত হচ্ছে, ভাবনা ভাগ করছে, পরিকল্পনা করছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে যেভাবে মানুষকে স্বাগত জানানো হয়, যে ভালোবাসা আর আতিথেয়তায় ঘিরে রাখা হয়, সেটা অবিশ্বাস্য। দেখো, এটা একধরনের দরজা খোলা- আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতে এখানে আমরা সবাই কাজ করব। সৌদি থেকে গায়ক, লেখক, কবি, নির্মাতা, সিনেমাটোগ্রাফাররা ভারতে যাবে, আর আমরাও এখানে এসে কাজ করব। একসঙ্গে গল্প বলার এই প্রচেষ্টা আমাদের পুরো পৃথিবীর সামনে নিয়ে যাবে।
সালমান খান: আর আমার মনে হয়, এটা আরব চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য বিশাল একটা সুযোগ হবে। সৌদি এখন ক্রমাগত থিয়েটার খুলছে- হাজার হাজার। এত বড় আরবি ভাষাভাষী দর্শক আছে যে, এই অঞ্চলেই বিশাল একটা বাজার তৈরি হবে। আরব অভিনেতা, টেকনিশিয়ান- সবার কাজের সুযোগ বাড়বে, আয়ও বাড়বে। আমি মনে করি, অদূর ভবিষ্যতে আরব চলচ্চিত্র শিল্প বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলোর একটি হয়ে উঠবে।
আমির খান: আমি আরও বলব, সৌদি আরব গত কয়েক বছরে যেভাবে তাদের কাজের মাধ্যমে দেখিয়েছে যে তারা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে চায়- সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। শুধু সৃজনশীল মানুষ নয়, খেলোয়াড়দেরও তারা বিশ্বজুড়ে থেকে আহ্বান করছে। এই বাস্তব পদক্ষেপগুলো প্রমাণ করছে তারা বড় পরিসরে বিশ্বসংযোগ গড়ে তুলতে চায়। এটা নিঃসন্দেহে সঠিক পথে এক শক্তিশালী পদক্ষেপ।
সালমান: সৌদি আরব আমাদের দেশের অনেক মানুষকে কাজের সুযোগ দিয়েছে। দক্ষিণ ভারত থেকে, ভারতের নানা জায়গা থেকে- সবাই এখানে এসে ভালোভাবে কাজ করছে, ভালো বেতন পাচ্ছে, পরিবারও ভালো আছে। এজন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ।
রাযান: তাহলে নিশ্চয়ই এখানে অনেক গল্প তৈরি হতে পারে, যেহেতু এত ভারতীয় মানুষ এখানে কাজ করছে। আমার মাথায় তো ইতিমধ্যে একটা গল্প ঘুরছে! তোমরা বলো, তোমাদের স্বপ্নের প্রজেক্ট কী হতে পারে যা সৌদি আরবে করা যায়?
সালমান খান: এখনই যদি তুমি এখানে একটা হিন্দি সিনেমা বানাও, সেটা হিট হবে! তামিল, তেলেগু বা মালায়ালম সিনেমাও যদি এখানে মুক্তি দাও, শুধু এই জিসিসি অঞ্চলে (আরব উপসাগরীয় এলাকা) শত কোটি টাকার ব্যবসা করবে। কারণ এখানে আমাদের দেশের এত মানুষ কাজ করছে- পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বালুচিস্তান- সবারই এখানে প্রতিনিধিত্ব আছে।
রাযান: দারুণ কথা। তুমি কী বলবে, শাহরুখ?
শাহরুখ খান: স্বপ্নের প্রজেক্ট? যদি আমরা তিনজন- আমি, সালমান আর আমির- একসঙ্গে একটা সিনেমা করি, সেটাই স্বপ্ন। (হাসি) ইনশাআল্লাহ, কোনো একদিন সুযোগ এলে আমরা করব। আমি সত্যিই ওদের দুজনকে শ্রদ্ধা করি- ওদের উত্থান, পতন, সংগ্রাম- সবকিছুই অনুপ্রেরণাদায়ক। আমি কৃতজ্ঞ যে আজ এক মঞ্চে, একসঙ্গে বসে কথা বলছি। যদি কখনো আমরা একসঙ্গে সিনেমা করি, আমরা শুধু চাই না যেন কেউ হতাশ হয়; কিন্তু আসলে ব্যাপারটা শুধু টাকার নয়। আমাদের তিনজনেরই কাজের নিজস্ব ধরন আছে। একদিন নিশ্চয়ই কেউ আসবে, আমাদের সব খামখেয়ালি সহ্য করবে, আর আমরা তিনজন একসঙ্গে কাজ করব- ইনশাআল্লাহ।
সালমান খান: আর যেদিন আমরা তিনজন একসঙ্গে কাজ করব, সেদিন সিনেমার আসল নায়ক বা তারকা কেউ না- শুধু স্ক্রিপ্টই হবে আসল তারকা।
আমির খান: আমার মনে হয়- আবেগের দিক থেকে আমরা তিনজনই এখন প্রস্তুত। এখন শুধু দরকার একটা ভালো গল্প। যেমন সালমান বলল, স্ক্রিপ্টটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ না এমন একটা গল্প আসে, যা আমাদের তিনজনের মন ছুঁয়ে যায়, ততক্ষণ সেটা হবে না।
রাযান: আজকের তরুণ অভিনেতাদের জন্য আপনারা কী পরামর্শ দেবেন?
আমির খান: আসলে এখনকার তরুণ অভিনেতাদের আমাদের কাছ থেকে কোনো পরামর্শের দরকার নেই- বরং আমাদেরই ওদের কাছ থেকে শেখা উচিত! দেখো না, ওরা প্রথম ছবিতেই কী অসাধারণ কাজ করছে!
সালমান খান: ওদের একটা বিশাল সুবিধা আছে- আমাদের সময়ে ক্যামেরা মানে ভয়! এখন তো বাচ্চারা জন্ম থেকেই ক্যামেরার সামনে। ফোনে, সিসিটিভিতে, দোকানে- সব জায়গায় ক্যামেরা! তাই তারা একদম ক্যামেরা-ফ্রেন্ডলি। আমরা প্রথমবার ক্যামেরা দেখলে নার্ভাস হতাম, এখনকার প্রজন্ম খুবই স্বাভাবিক।
শাহরুখ খান: তবে আমার ছোট একটা পরামর্শ আছে। এখনকার তরুণরা ক্যামেরার সঙ্গে খুব মানিয়ে নিয়েছে- এটা চমৎকার; কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখা দরকার- শিল্প (art) আর কারিগরি (craft) আলাদা জিনিস। প্রযুক্তি এখন সবার হাতে, সেটা শেখা দরকার, কিন্তু শিল্পকে হারাতে দিও না। শিল্প মানে হলো সেই সরলতা, সেই নিষ্পাপ আবেগ- যেটা সালমান ধরে রেখেছে, আমির ধরে রেখেছে, আমিও রাখার চেষ্টা করছি। যেমন আমরা ছোটবেলায় বাবা-মায়ের মুখে গল্প শুনতাম, সেই সহজভাবে গল্প বলাটাই হলো আসল শিল্প। প্রযুক্তি, সোশ্যাল মিডিয়া, তারকাখ্যাতি- এসবের ভিড়ে যেন হৃদয়ের শিল্পটা হারিয়ে না যায়। কারণ “art is the heart.”
রাযান: দারুণ- “শিল্প মানে হৃদয়।”
শাহরুখ খান: হ্যাঁ, আর একটা কথা- আমরা সবাই ব্যর্থ হই, ভুলও করি। আমরা জানি, কোনো কোনো দিন কাজটা ঠিক মতো হয়নি; কিন্তু পরের দিন সকালেই আবার উঠে দাঁড়াই, কারণ আমরা জানি- আমাদের কাজ গল্প বলা।
রাযান: অসাধারণ! কিন্তু আমাদের সময় শেষ হয়ে আসছে। এক লাইনে বলুন, আপনাদের চোখে বলিউডের ভবিষ্যৎ কেমন হবে?
শাহরুখ খান: আমি মনে করি, এখন শুধু “বলিউড” বা “দক্ষিণী সিনেমা” বলে ভাগ করার সময় নয়। আমাদের উচিত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে সৌদি আরবকে ধন্যবাদ জানানো- আমাদের এমন সুযোগ দেওয়ার জন্য।
রাযান: ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।
শাহরুখ খান: ইনশাআল্লাহ, আমরা আবার আসব, আবার কাজ করব- সৌদি, ভারত- দুদেশ একসঙ্গে, সারা বিশ্বের জন্য সিনেমা বানাতে।
অনুলিখন: চলচ্চিত্র নির্মাতা দীপংকর দীপন
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে