বাংলাদেশের আইটি ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে সার্ভিসিং২৪
বাংলাদেশের আইটি খাত গত তিন দশকে অসাধারণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, দক্ষতার ঘাটতি, আইনগত জটিলতা এবং গবেষণা ও উন্নয়নে কম বিনিয়োগের মতো কিছু চ্যালেঞ্জ এই খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাধাগুলো চিহ্নিত করে দেশের আইটি ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করতে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও ভবিষ্যতোপযোগী এন্টারপ্রাইজ সল্যুশন নিশ্চিত করতে কাজ করছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় থার্ড-পার্টি মেইনটেনেন্স (টিপিএম) সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সার্ভিসিং২৪।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা নাসির ফিরোজ তার এ যাত্রা সম্পর্কে বলেন, “আমার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশে টিপিএম সেবা প্রতিষ্ঠা করা। বিশেষ করে মহামারীর পর, যেখানে এই খাতে আগের কোনোও সফল উদাহরণ বা গবেষণা ছিল না। এক্ষেত্রে আমার সবকিছু বিনিয়োগ করতে হয়েছিল; লাগাতার কাজ ও বিশাল অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে পথ চলতে হয়েছিল। যাত্রা কঠিন হলেও এর ফলাফল এখন পাচ্ছি। এটি আমাকে শিখিয়েছে যে দৃঢ় সংকল্পই সাফল্যের প্রকৃত চালিকাশক্তি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এটি আমাকে দেখিয়েছে যে, কঠোর পরিশ্রম ও বিশ্বাসের মাধ্যমে বাংলাদেশেও উদ্যোগ সফল হতে পারে।”
বাংলাদেশের আইটি খাতে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন, অপর্যাপ্ত ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, শিক্ষা ও শিল্পের মধ্যে দক্ষতার ঘাটতি, উদ্ভাবনে কম বিনিয়োগ এবং কম খরচের শ্রমের ওপর নির্ভরশীলতা। সরকার গত ১৫ বছরে আইসিটি খাতে প্রায় ২৯০ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু, খাতটি এই সম্পদ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। নাসির ফিরোজের মতে, এই সমস্যা সমাধানে অবকাঠামো শক্তিশালী করা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচী যুগোপযোগী করা, স্বচ্ছ নীতি বাস্তবায়ন করা এবং উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। একইসাথে, সরকারের ব্যয় যেন কার্যকর সুবিধা প্রদান করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
নাসির ফিরোজ এই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য এন্টারপ্রাইজ আইটি সাপোর্ট প্রদান করতে চান। যেন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উন্নতির দিকে মনোযোগ দিতে পারে এবং ডাউনটাইম কমিয়ে এনে দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে। তার প্রতিষ্ঠান চীন ও ভিয়েতনামের মতো শীর্ষস্থানীয় আইটি ইকোসিস্টেমের মতো করে বৈশ্বিক মানদণ্ডের সাথে মিল রেখে আইটি অবকাঠামো আধুনিকীকরণের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। যেখানে ব্যাপকভাবে ক্লাউড ব্যবহার, ধারাবাহিকভাবে দক্ষ পেশাদার গড়ে ওঠা এবং শক্তিশালী সরকারি সহায়তা রয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য স্থিতিশীল ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে চাইলে শিক্ষাকে আধুনিক আইটি দক্ষতার সাথে মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে গুরত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান তৈরি করতে সমর্থনমূলক নীতির মাধ্যমে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে হবে।
সাইবার আক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে বেড়েছে বলে জানান নাসির ফিরোজ।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাকের মতো ঘটনা ঘটে, যেখানে প্রতারণামূলক সুইফট লেনদেনের মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করা হয়। ২০২৩ সালে আরেকটি ডেটা চুরির ঘটনা ঘটে, যেখানে ৫ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। এই ঘটনাগুলো শক্তিশালী আইটি অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। বলা চলে, সাইবার হুমকি প্রতিরোধ এবং টেকসই ধারাবাহিকতা প্রদানে নিরাপদ, দক্ষ ও স্থিতিশীল আইটি নিশ্চিত করতে কাজ করছে সার্ভিসিং২৪।
আজকের যুগে যেখানে ডিজিটাল রূপান্তর ব্যবসায়িক সাফল্যের মূল বিষয়, সেখানে সার্ভিসিং২৪ আগামীর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করতে ইতিবাচক ভূমিকা নিচ্ছে। তারা এআই ও আইওটিচালিত আইটি পরামর্শ সেবা চালু করেছে। এই সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ডিজিটাল রূপান্তর কৌশল ডিজাইন করতে, এআই-ভিত্তিক বিশ্লেষণ এবং অটোমেশন বাস্তবায়ন করতে, স্মার্ট সার্ভার, স্টোরেজ ও নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্টের জন্য আইওটি নিশ্চিত করতে, সাইবার সিকিউরিটি শক্তিশালী করতে এবং হাইব্রিড ও ক্লাউড অবকাঠামো ম্যানেজমেন্ট সহজ করতে সহায়তা করছে।
এর মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আগামীর জন্য প্রস্তুত হতে পারে; কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে সক্ষম হতে পারে।
নাসির ফিরোজ সাসটেইনেবিলিটির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। আইটি দক্ষতা উন্নত করা ও ই-ওয়েস্ট কমানোর মাধ্যমে সার্ভিসিং২৪ কেবল এই খাতের প্রবৃদ্ধিই নিশ্চিত করছে না, পরিবেশ সুরক্ষায়ও অবদান রাখছে।
তাদের সেবাগুলো স্টার্টআপ থেকে শুরু করে বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সবাইকে সহায়তা করতে ডিজাইন করা হয়েছে, যা সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য সমাধান প্রদান করে এবং একইসাথে, নিরাপদ ও টেকসই ডিজিটাল কার্যক্রম নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে।
ভবিষ্যতে, সার্ভিসিং২৪ এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়, যেখানে শক্তিশালী আইটি অবকাঠামো উদ্ভাবনকে সক্ষম করবে, এই খাতের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ ও দক্ষভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে ক্ষমতায়িত করবে। প্রতিষ্ঠানটি আগামী প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যত তৈরিতে দেশের ডিজিটাল রূপান্তর ও উদ্ভাবনে নিরলস কাজ করে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে