ফাঁকা রাজধানী, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা
ঈদুল আজহা সামনে রেখে ঢাকায় শুরু হয়েছে ছুটির আমেজ। সরকার ঘোষিত ছুটির সঙ্গে অনেকে নিজেদের মতো করে বাড়তি ছুটি মিলিয়ে নিচ্ছেন। অনেকেই পরিবার নিয়ে ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন, কেউ কেউ এরই মধ্যে চলে গেছেন। ফলে রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে। বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন আর লঞ্চঘাটে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় বাড়ছে।
এই আনন্দময় পরিবেশের মাঝেও নিরাপত্তা নিয়ে অনেকের মনে শঙ্কা রয়েছে। কেউ কেউ ঢাকায় থাকছেন শুধু বাসার নিরাপত্তার কথা ভেবেই।
পীরেরবাগের গৃহিণী শফিকুন্নাহার শান্ত বলেন, আমাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য ঢাকাতেই থাকবো এই ঈদে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই ভালো। তবে এখনও কিছু কিছু ঘটনায় উদ্বেগ থেকে যায়। তাই গ্রামে গিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না।
উত্তরার চাকরিজীবী নাঈম রহমান বলেন, ঢাকা যখন ফাঁকা হওয়ায় অপরাধীরা এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায়। পুলিশ সব জায়গায় নজরদারি রাখতে পারবে না, এটা বাস্তবতা। তাই আমি এবং আমার পরিবার ঢাকাতেই ঈদ করবো, অন্তত নিজের বাসাটার দেখভাল তো নিজেরাই করতে পারি।
তবে মিরপুরের ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট তৎপর। আমি নিয়মিত ব্যবসা করি, দেখছি পুলিশ-র্যাবের সক্রিয় উপস্থিতি। তাই আমি ঈদে গ্রামে যাচ্ছি, এতে কোনো ভয় নেই।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক জানান, রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। যারা সমাজে অর্থ-ক্ষমতায় বলীয়ান, তারা এই পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। বরং সাধারণ মানুষের মধ্যেই নিরাপত্তা নিয়ে ভয় কাজ করে। বিশেষ করে তারা আশঙ্কা করে ছিনতাই, ডাকাতি কিংবা ঘরে চুরি হওয়ার। সেইসঙ্গে অনেকের ভয়— সমস্যায় পড়লেও হয়তো সঠিকভাবে আইনের সহায়তা মিলবে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিকেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ঈদুল আজহা সামনে রেখে আমরা সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত টহল টিম। কোরবানির পশুর হাটে যাতে চাঁদাবাজি না হয়, সে জন্য আলাদা ইউনিট কাজ করছে। প্রতিটি থানার মাধ্যমে মহল্লায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া শাখার এআইজি ইনামুল হক সাগর জানান, ঈদের সময় যাতে নাগরিকরা নিশ্চিন্তে উৎসব পালন করতে পারে, সে জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, পাড়া-মহল্লায় টহল বাড়ানো হয়েছে এবং এটিএম বুথেও নজরদারি রাখা হচ্ছে। হাট ও পশুবাহী ট্রাকের নিরাপত্তায়ও বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে।
র্যাবের পক্ষ থেকেও বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। র্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মুত্তাজুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন। কোরবানির পশুবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি রোধ, হাটের নিরাপত্তা, জাল টাকা ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছিনতাই, ডাকাতি ঠেকাতে টহল বাড়ানো হয়েছে।
সবচেয়ে বড় চিন্তা যারা ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন তাদের। কারণ, তারা বাসা ফাঁকা রেখে যাচ্ছেন। আবার যারা ঢাকায় থাকছেন, তাদের একটু হলেও স্বস্তি—নিজের বাসার দেখভাল নিজেরাই করতে পারছেন।
সব মিলিয়ে ঢাকায় ঈদের আগের চিত্র মিশ্র। একদিকে উৎসবের আমেজ, অন্যদিকে নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা। তারপরও সবার আশা—পুলিশ ও প্রশাসনের চেষ্টা যেন ঈদের এই সময়টাকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ করে তোলে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে