Views Bangladesh Logo

নীরব মহামারি থেকে শিশুদের বাঁচান

শীত আসছে। উত্তরে বাতাসের সঙ্গে আসছে এক ভয়াবহ দুঃসংবাদ। কারণ, বাংলাদেশে বাড়ছে বায়ুদূষণ। যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে শিশুরা। সংবাদমাধ্যম প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলো ইতোমধ্যে ভরে গেছে রোগীতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মৌসুমে বায়ুদূষণের মাত্রা আরও বাড়লে তা এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিতে পারে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাতাসের ভারী কণাগুলো মাটির কাছাকাছি আটকে থাকে ফলে এ সময় শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের রোগ দ্রুত বাড়ে।

হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইউনিসেফের যৌথ প্রকাশনা ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০২৪’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১৯,০০০ শিশুর বায়ুদূষণজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫০টিরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলো ইতোমধ্যে ভরে গেছে রোগীতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মৌসুমে বায়ুদূষণের মাত্রা আরও বাড়লে তা এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিতে পারে।

হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইউনিসেফের যৌথ প্রকাশনা ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০২৪’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১৯,০০০ শিশুর বায়ুদূষণজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫০টিরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাতাসে ক্ষুদ্র কণার (পিএম ২.৫) মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত নিরাপদ সীমার ১৪ গুণ বেশি। ঢাকার মতো শহরে প্রতিদিনের দূষণমাত্রা প্রায় ১০০ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত নিরাপদ সীমা মাত্র ৫ মাইক্রোগ্রাম। বাতাসের এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাগুলো শিশুদের ফুসফুসে প্রবেশ করে। যা থেকে তাদের নিউমোনিয়া, অ্যাজমা ও দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসযন্ত্রের জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে।


সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশু রোগীতে ঠাসা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বায়ুদূষণজনিত রোগে প্রতি বছর বাংলাদেশে কয়েক হাজার শিশু মারা যাচ্ছে। হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস- এসব শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগ এখন শিশু স্বাস্থ্যের প্রধান হুমকি। একদিকে উন্নয়নের নামে অব্যবস্থাপনা অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন, নিম্নমানের জ্বালানি, ইটভাটার কালো ধোঁয়া আর নির্মাণস্থলের ধুলাবালি- সব মিলিয়ে বাতাসে ভাসছে মৃত্যুর বীজ।

সরকারের ব্যাপক সচেতন উদ্যোগ ছাড়া এই মহামারি থেকে মুক্তির পথ নেই। সরকার মাঝে মাঝে বায়ুদূষণ রোধে কিছু অভিযান চালালেও তা বেশি সময় স্থায়ী হয় না। ইটভাটাগুলো কিছুদিন বন্ধ রেখে আবার চালু হয়ে যায়, নির্মাণস্থলে ধুলা উড়তেই থাকে, নিম্নমানের ডিজেল ও পেট্রোল ব্যবহারও বন্ধ হয় না। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন থাকলেও প্রয়োগ দুর্বল, দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর সমন্বয়ও নেই।

সময় এসেছে বায়ুদূষণকে জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করার। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার, গণপরিবহন সংস্কার, সবুজ অবকাঠামো বৃদ্ধি এবং নির্মাণস্থলে কঠোর মাননিয়ন্ত্রণ- এসব উদ্যোগ এখনই নিতে হবে। শহরে শিশুদের জন্য সবুজ খেলার মাঠ ও বিশুদ্ধ বাতাসের নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিষাক্ত বাতাসের এই নীরব মহামারি থামাতে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকেও সচেতনতা জরুরি। এই শীতে বায়ুদূষণের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করুন। পাশাপাশি বায়ুদূষণ রোধে প্রতিটি মানুষেরই সচেতনতা জরুরি। আমাদের সবার সচেতনতাই কোমলপ্রাণ শিশুদের বাঁচাতে পারে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ