Views Bangladesh Logo

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে রাশিয়ার স্বীকৃতি

বিশ্বে প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করল রাশিয়া। তালেবান সরকারের চার বছরের শাসনামলে এটাই তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

রুশ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “রাশিয়ার এই স্বীকৃতি দুই দেশের মধ্যকার ইতিবাচক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনার পাশাপাশি পারস্পরিক সম্মান ও গঠনমূলক অংশীদারত্বের ভিত্তি তৈরি করবে। এটি অন্য দেশগুলোর জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কাবুলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি জিরনোভের সঙ্গে বৈঠক করেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে দিমিত্রি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন যে, রাশিয়া ‘ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান’ সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।

এর অংশ হিসেবে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা যায়, নতুন আফগান রাষ্ট্রদূত গুল হাসান তার পরিচয়পত্র রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রুদেনকোর হাতে তুলে দিচ্ছেন।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার পদক্ষেপ আমাদের দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিকাশে গতি আনবে।

মন্ত্রণালয়টি আরও জানায়, ‘আমরা বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছি, বিশেষ করে- জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি এবং অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলো নিয়ে। আমরা কাবুলকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে এবং সন্ত্রাসবাদ ও মাদক সম্পর্কিত অপরাধের হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা অব্যাহত রাখব।’

২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে তালেবান সরকার। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নারীদের অধিকার হরণের অভিযোগে এখনো তারা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত।

চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তান কাবুলে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করলেও তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার সাহস দেখায়নি কেউ। একমাত্র রাশিয়াই এবার সেই পদক্ষেপ নিল।

উল্লেখ্য, তালেবান শাসন শুরু হওয়ার পরও রাশিয়া তার কাবুল দূতাবাস চালু রাখে। টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বার্তায় রুশ কর্তৃপক্ষ জানায়, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আফগানিস্তানের সঙ্গে সংলাপ ও সম্পর্ক সম্প্রসারণ অত্যন্ত জরুরি।

এর আগেই ২০২২ সালে তালেবান সরকারের সঙ্গে প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি করে রাশিয়া, যার আওতায় আফগানিস্তানে তেল, গ্যাস ও গম রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এছাড়া চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দেয় রাশিয়া। তাদের মতে, এতে ‘সম্পূর্ণ অংশীদারিত্ব’ গঠনের পথ সহজ হবে।

এরপর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক বক্তব্যে তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে মিত্র’ বলেও উল্লেখ করেন। মূলত ২০১৮ সাল থেকেই তালেবান প্রতিনিধিরা নিয়মিত মস্কো সফর করে আসছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ