Views Bangladesh Logo

চুরুলিয়ার নজরুল সংগ্রহশালা থেকে কবির ব্যবহৃত জিনিস সরানোকে ঘিরে বিতর্ক

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া এখন উত্তপ্ত। চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমি মিউজিয়াম থেকে কবির ব্যক্তিগত সংগ্রহের জিনিসপত্র আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সরিয়ে নেয়ার বিরোধিতা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কবির পরিবারের একাংশের। তাদের মতে, এটি ঐতিহ্য ও জনআস্থার অবমাননা।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে নজরুলের ভাইপো কাজী আলি রেজা এই উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি জানান, কবির পাণ্ডুলিপি, স্মৃতিচিহ্ন, ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রীসহ সংগ্রহশালার একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়বার সরানোর সময় আমরা বাধা দিয়েছি।

তার অভিমত, ‘ভারত ও বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ এখানে আসেন নজরুলের জীবন ও উত্তরাধিকারের সঙ্গে যুক্ত হতে। এসব জিনিস সরানো মানে চুরুলিয়ার সাংস্কৃতিক ও আবেগঘন পরিচয় ছিনিয়ে নেয়া।’

আলি রেজা আরও বলেন, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে একবার বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, নজরুল একাডেমি থেকে কোনো জিনিসই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যাওয়া হবে না। বরং সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আমরা যেন কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেন সংগ্রহ করে তার জন্মভিটের মিউজিয়ামে রাখতে পারি। এখন দেখছি, সেগুলোই অন্যত্রে চলে যাচ্ছে।

রেজা মিউজিয়ামের সংস্কারের জন্য আর্থিক সহায়তা অপূর্ণ থাকার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র। তিনি বলেন, নজরুল মেলা উপলক্ষে কয়েকদিন আগেই আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ সদস্য শত্রুঘ্ন সিনহা কবি নজরুলের বাড়িটি সংস্কারের জন্য ১০ লাখ রুপি আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীও আলাদা করে ৫ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই অর্থ আমরা পাইনি, কোথায় গেল, কি কাজ হয়েছে তা এখনো আমাদের জানা নেই।

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে নজরুল একাডেমির সদস্য ও সঙ্গীতশিল্পী সোনালী কাজী বলেন, “নজরুলের মিউজিয়াম শুধুই একটি সংগ্রহশালা নয়, এটি আমাদের গ্রামের প্রাণ।”

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. চন্দন কোনার জানান, নজরুল একাডেমি, সংগ্রহশালা ও জন্মভিটে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। রাজ্য সরকারের ট্যুরিজম দপ্তরের অর্থায়নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১.৫ কোটি টাকার সংস্কার প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

কোনার বলেন, “সংস্কারের সময় কবির মূল্যবান পাণ্ডুলিপি ও সামগ্রী নিরাপদে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। সংস্কার শেষ হলে সব সংগ্রহ ফিরিয়ে দেয়া হবে। আমাদের উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক মানের মিউজিয়ামে উন্নীত করা।”

সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “নজরুল কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন। বিশ্বজুড়ে মানুষ তার কাজ অধ্যয়ন করেন। দুর্ভাগ্যজনক যে, কেউ কেউ তার উত্তরাধিকার নিয়ে একাধিকার দাবি করতে চাইছেন।”

চুরুলিয়ার এই সংগ্রহশালা নজরুলের স্মৃতিতে গড়ে উঠেছে ১৯৫৮ সালে, যেখানে কবির হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, প্রথম দিকের প্রকাশনা, বাদ্যযন্ত্র, পোশাক, পুরস্কার, এবং স্ত্রী প্রমীলা দেবীর ব্যবহৃত বিছানাসহ নানা জিনিস সংরক্ষিত রয়েছে। এমনকি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তার শেষকৃত্যের দুর্লভ ছবিও দর্শকদের আকর্ষণ করে।

তবে বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুরুলিয়ার বাসিন্দা এবং নজরুল পরিবারের একটাই দাবি, কবির স্মৃতিচিহ্ন থাকুক তার জন্মভিটেতেই।

অন্যদিকে রাজ্যের আশ্বাসে পরিস্থিতি কতটা শান্ত হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ