রোহিঙ্গা: এই ক্যান্সার নিরাময়ের ওষুধ কী?
শরীরের কোনো অংশে যদি ক্যান্সার হয় এবং এটা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়ে তাহলে এই রোগ সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। একটা পর্যায়ে আর চিকিৎসা করা যায় না। অর্থাৎ চিকিৎসা কাজ করে না। কিছুদিন ভোগার পর আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যান। আর যদি প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত করা যায় তাহলে চিকিৎসায় সেরে ওঠেন আক্রান্ত ব্যক্তি। অনেক ধকল আর অর্থ ব্যয় হলেও অন্তত প্রাণটা বেঁচে থাকে।
বাংলাদেশও তেমন একটা ক্যান্সারে আক্রান্ত। সারা দেশে এই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছে। এই রোগ শনাক্ত হয়েছে ঠিকই; কিন্তু ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। যদি এখনই এই ক্যান্সারের বিস্তার রোধ না করা যায় তাহলে বাংলাদেশকে অনেক ভুগতে হবে। পরিণামে হয়তো কোনো অঙ্গ কেটে ফেলতে হতে পারে।
প্রিয় পাঠক বলছিলাম রোহিঙ্গাদের কথা। তারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার পাঁয়তারা করছে। টাকার বিনিময়ে এই দেশের কিছু অসাধু ব্যক্তি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করে দিচ্ছেন। তাদের পাসপোর্টও করে দিচ্ছেন একশ্রেণির কর্মকর্তা। এই গণশত্রুদের কারণে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তারা সেখানে অপকর্ম করছেন এবং এর দায় পড়ছে বাংলাদেশের ওপর। এ কারণে আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। একটা সময় ওই সব দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিরা নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
সারা দেশে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া নতুন কিছু নয়। বহু আগে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশে বিয়ে-শাদি করে স্থানীয় হয়ে গেছেন। তারা এত বছর ধরে আছেন যে তাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করা এখন বেশ কষ্টসাধ্য। আর ২০১৭ সালের পর থেকে যারা এসেছেন; তাদের সিংহভাগ কক্সবাজার এবং নোয়াখালীর ভাসানচরে ক্যাম্পে রয়েছেন। তাদের অনেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছেন। অনেককে আটক করে আবার ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে; কিন্তু এরপরও তাদের ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা বন্ধ হচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরতে চাই।
গত ১৬ জানুয়ারি নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ভাসানচর ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা ৯ রোহিঙ্গাকে আটক করে স্থানীয়রা। রাত সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্রসৈকত এলাকা থেকে তাদের আটক করে পুলিশে দেয়া হয়। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয় গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর। ইমিগ্রেশন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন।
২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে পাসপোর্ট করতে গিয়ে আটক হন দুই রোহিঙ্গা। ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন তাদের আটক করেন। আটক রোহিঙ্গারা হলেন নাসিমা ও সাঈদ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। ওই বছরের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া আঞ্চলিক অফিসে পাসপোর্ট করার সময় মো. সবুজ নামে এক রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। জেলা নির্বাচন অফিস থেকে নিজ নামে ভোটার আইডি কার্ড এবং কুষ্টিয়া পৌর এলাকার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঝালুপাড়ার ঠিকানা ব্যবহার করে তিনি পাসপোর্ট করতে যান। সেখানে আবেদন জমাসহ সব কার্যক্রম শেষে ফিঙ্গার প্রিন্টে মিল না পাওয়ায় তাকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন। এছাড়া ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, যশোর, বরগুনায়ও পাসপোর্ট করতে গিয়ে রোহিঙ্গারা আটক হয়েছেন। এক কথায় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় তারা ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন জায়গার তারা পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে নাগরিকও বনে গেছেন।
কতজন রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট:
কতজন রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে, তার সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই। ২০১৮ সালে তখনকার প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা অবৈধ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ভাবমূর্তি সংকটের মুখে পড়ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দালালরা ঘুষের বিনিময়ে পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগসাজশের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের এই পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দেয়। এরপর গত ৭ বছরে আরও কতজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েছেন সেই খবর কে রাখে? ঘটনা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সৌদিতে ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন। ১৯৭৫ সালের পর থেকে কয়েক ধাপে সৌদি আরবে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেন। এই রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে গেছেন। আবার অনেক রোহিঙ্গা সৌদিতে অবস্থানকালে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ সরকার এসব রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়ন করে দিতে সম্মত হয়। এ বিষয়ে রিয়াদের সঙ্গে ঢাকার একটি চুক্তি হয়।
৫০ হাজার রোহিঙ্গা ভোটার:
অসাধু জনপ্রতিনিধি আর নির্বাচন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছেন। এজন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব ঘটনায় জড়িত অপরাধী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসছে। ইসি ভোটার তালিকা প্রথমবার হালনাগাদ করার সময় সীমান্তবর্তী বিভিন্ন উপজেলার ৫০ হাজার রোহিঙ্গা ভোটার শনাক্ত হয়। উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের পর ৪২ হাজার রোহিঙ্গা ভোটারের নিবন্ধন বাতিল করা হয়।
অপরাধ:
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে হেন কোনো অপরাধ নেই; যা সংঘটিত হয় না। সেখানে চলে জমজমাট অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা। মানব পাচারের ঘটনাও আছে। সাত মাসে ১৬টি অস্ত্র মামলায় ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ছিল ওয়ান শুটারগান ২৪টি। একই সময়ে ৩১টি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৫ জনকে। উদ্ধার করা হয়েছে আইস-ক্রিস্টাল মেথ, ইয়াবাসহ বিপুল মাদকদ্রব্য। এর মধ্যে ইয়াবা ট্যাবলেট ৭০ হাজারটি। এসব ক্যাম্পে আগ্নেয়াস্ত্র আসছে মিয়ানমার থেকে।
পাশাপাশি অস্ত্র তৈরি হচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালীসহ বিভিন্ন স্থানেও। এসব অস্ত্রই কাজ করছে আধিপত্য লড়াইয়ের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে। গ্রুপগুলো হলো- আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি), আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন), আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), নবী হোসেন গ্রুপ (গ্রুপ প্রধান নিহত), মাস্টার মুন্না গ্রুপ, দীল মোহাম্মদ ওরফে মার্স গ্রুপ, ডাকাত সালমান গ্রুপ ও ডাকাত সাদ্দাম গ্রুপ। এসব গ্রুপের তৎপরতায় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ২০২টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। কেবল আরসা, আরএসও এবং এআরএ এর মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণেই ৬৭ ভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই মূলত এ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি। গত ৪ বছরের বিভিন্ন সময়ে আটটি গ্রুপের মধ্যে সংঘটিত এসব ঘটনায় অন্তত ২০২ জন খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এছাড়া রোহিঙ্গারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধে লিপ্ত। প্রায় প্রতিদিনই সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন তারা। তাদের ভয়ে স্থানীয়রা অসহায় হয়ে পড়েছেন। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৭৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এছাড়া ২০২০ সালে ১০টি; ২০২১ সালে ৩০টি; ২০২২ সালে ৩১টি এবং ২০২৪ সালে ৫৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
জনসংখ্যার ভার:
জনশুমারি ও গৃহগণনায় ২০২২ বলছে, বাংলাদেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ১ হাজার ১১৯ জন মানুষ বাস করে। এমনিতেই দেশে জনসংখ্যার আধিক্য। দিন দিন কমছে আবাদি জমি। প্রযুক্তির ব্যবহারে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়লেও আমদানির ওপর বহুলাংশে নির্ভর করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সেনা চৌকিতে হামলাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সালে জাতিগত নিধন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর মূল শিকার হয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। চালানো হয় গণহত্যা। ধর্ষণের শিকার হন নারীরা। একপর্যায়ে তারা বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হতে থাকেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে সরকার সীমান্ত খুলে দেয়। ২৫ আগস্ট শুরু হয় রোহিঙ্গা ঢল। কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। যেখানে আগে থেকেই ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
এই কয়েক বছরে সেখানে জন্ম নিয়েছে আরও বিপুলসংখ্যক মানুষ। রোহিঙ্গা নেতা জোবায়ের জানিয়েছেন, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর বাইরে নোয়াখালীর ভাসানচরে রয়েছে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা। কয়েক দিন আগে এসেছে আরও এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এই সম্প্রদায়ের ১৫ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করছে। কর্মহীন এই মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নামমাত্র সহায়তা দিচ্ছে। বাকি টাকা দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে। তাদের ঘরবাড়ি করতে গিয়ে বন উজাড় করতে হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। স্থানীয়দের জনজীবনেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। রোহিঙ্গাদের কারণে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তাদের কাজের উৎস ছোট হয়ে গেছে।
নতুন বিপদ বয়ে আনছে রোহিঙ্গা:
শরণার্থী শিবিরগুলোতে অবস্থান করা ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পাশাপাশি আরাকান আর্মির সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার; কিন্তু এই চেষ্টা বিফলে যেতে বসেছে রোহিঙ্গাদের কারণেই।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গারা যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সশস্ত্র গ্রুপগুলো এক জোট হচ্ছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে তরুণদের তারা সশস্ত্র যুদ্ধে নামাচ্ছে। এক সময় তারা জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ছিল। তাদের সমর্থন ছিল আরাকান আর্মির পক্ষে; কিন্তু এখন তারা জান্তা বাহিনীর পক্ষ নিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামছে। কারণ আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে। এর মধ্যেই রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির ওপর হামলা শুরু করেছে এবং সীমান্তের শিবিরগুলোতে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এই সশস্ত্র তৎপরতা আরও তীব্রতর হলে সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিক, আরাকান আর্মি এবং বাংলাদেশ, সবপক্ষের জন্যই মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর অভিযান সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
গোষ্ঠীগুলো সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তেমনি মিয়ানমারেও রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব আরও বেড়ে যেতে পারে। এতে রাখাইন রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ এবং রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্যে আরও রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াবে এবং সেই সংঘাত থেকে বাঁচতে সেখানকার রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে। এটি বাংলাদেশ সরকারের জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা আরও কঠিন করে তুলবে। কারণ আরাকান আর্মি মনে করে, ঢাকা রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে। (বিবিসি, ১৯ জুন ২০২৫)।
আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয়ার কথা অস্বীকার করছে ঢাকা। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের ভাষ্য, ক্যাম্পে সশস্ত্র তৎপরতা চলছে, ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে- এগুলো অসত্য কথাবার্তা। উনারা যা বলছেন, সেগুলোর কোনো এভিডেন্স (প্রমাণ) নেই। আমরা সব সময় ক্যাম্পগুলো মনিটর করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। তাদের চোখের সামনে এগুলো ঘটবে- এটা অসম্ভব ব্যাপার।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামানের মতে, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যুদ্ধ শুরু হলে তখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অনিরাপদ হয়ে পড়বে। আরাকান আর্মি সেখানে ঢুকে তাদের প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালাতে চাইবে। সব মিলিয়ে বিষয়টি দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক হুমকিতে পরিণত হবে।
পরিত্রাণের উপায়:
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; কিন্তু তারা কথা রাখেনি। এখন রোহিঙ্গাদের ফেরানোর পথ একেবারে বন্ধ বলতে হবে। কারণ রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জান্তা সরকারের সঙ্গে; কিন্তু তাদের ঘরবাড়ি রাখাইন রাজ্যে। এই রাজ্য এখন নিয়ন্ত্রণ করছে বিদ্রোহীরা। সেখানে মাঝেমধ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের তুমুল যুদ্ধ হয়। সুতরাং তাদের প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত। তাই বলে কী তাদের প্রত্যাবাসন অসম্ভব? না। অবশ্যই সম্ভব। এই দায়িত্ব নিতে হবে জাতিসংঘকে। সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়নে রাখাইন কিংবা পাশের চীন রাজ্যে তাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলা যেতে পারে। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী।
সিরাজুল ইসলাম: সাংবাদিক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে