পাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে সংকট আগেভাগে দূর করুন
গত বছর পাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। পাঠ্যক্রম বদলানো ও পাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে দেরি হয়ে যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের বই পেতে তিন-চার মাস দেরি হয়ে গিয়েছিল। কোনো কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীরা বই পেয়েছে বছরের মাঝামাঝি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা না কি এখনো সব বই হাতে পায়নি এমনো অভিযোগ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, গতকাল বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, পাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে এবারও সংকট তৈরি হয়েছে। ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে সংকটে পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে প্রায় তিন মাস দেরি হওয়ায় শিক্ষা বিভাগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবার বই ছাপানোর কাজের প্রক্রিয়া আগেভাগেই শুরু করেছিল এনসিটিবি।
নভেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যও ছিল; কিন্তু শেষ সময়ে এসে মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির (ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম) পাঠ্যবইয়ের দরপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় পুরো পরিকল্পনাটিই এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এর ফলে জানুয়ারিতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে এনসিটিবির কর্মকর্তারাই নিশ্চিত নন। তাদের মতে, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই আবার দরপত্র দিয়ে ছাপিয়ে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া কঠিন হবে।
এনসিটিবির সূত্র জানায়, আগামী বছর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রায় ৮ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বই প্রয়োজন হবে। এবার মোট বইয়ের সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কম। দরপত্রের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে মূল্যায়নের কাজও সম্পন্ন করেছিল এনসিটিবি; কিন্তু সম্প্রতি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর দরপত্র বাতিল করা হয়। তবে কী কারণে তা বাতিল করা হয়েছে, এনসিটিবিকে সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সরকার কেন এত অবহেলা করছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। দরপত্র কেন বাতিল হলো কেন তা এনসিটিবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি তা নিশ্চিতভাবেই শিক্ষাব্যবস্থার অবহেলাকে চিহ্নিত করে। এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপানোর প্রক্রিয়া এগিয়েছে অনেকটাই। দরপত্র, মূল্যায়ন ও অনুমোদনের কাজও শেষ হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকের বই ছাপাতে মুদ্রণকারীদের সঙ্গে এখন চুক্তি করছে এনসিটিবি। নিয়ম অনুযায়ী, চুক্তির পর ৭০ দিনের মধ্যে বই সরবরাহ করতে হবে। শিগগিরই প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বইয়ের মুদ্রণও শুরু হবে।
নবম-দশম শ্রেণি এবং মাদ্রাসার ইবতেদায়ি স্তরের বইয়ের দরপত্র শেষ হলেও এখনো ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পায়নি। শিগগিরই তা সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে এনসিটিবি। এক বছরে একটি শ্রেণিকে অত্যন্ত ১০টি বই পড়ে শেষ করতে হয়। নবম-দশম শ্রেণি দুবছর সময় পায় তাদের সেলেবাস শেষ করার জন্য। মাধ্যমিক পর্যায়ে এ দুটো বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে একটি মাসও গুরুত্বপূর্ণ। পাঠ্যপুস্তক হাতে না পেলে তাদের যে কী বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হবে তা নিশ্চয়ই শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় আছে।
এবার পাঠ্যবই দেরি করে হাতে পাওয়াতে শিক্ষার্থীদের কী বিশাল ক্ষতি হয়েছে তাও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন। সিলেবাস শেষ না করেই অনেক ক্ষেত্রে আংশিক শেষ করে স্কুলগুলো পরীক্ষা নিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী পাঠ্যপুস্তকের অনেক বিষয় সম্পর্কে জানাবোঝা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এ ক্ষতি তাদের পক্ষে হয়তো ভবিষ্যতেও কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব হবে। বছর শেষ হতে এখনো ৩ মাস বাকি। আমরা চাই এর মধ্যে যে করেই হোক আগামী বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেয়া হোক। এতে যেন কোনো অবহেলা না হয়। কোনো কারণ দর্শেই সরকার এই অবহেলাকে পাশ কাটাতে পারবে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে