Views Bangladesh Logo

শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা

আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন

শিক্ষকরা জাতির বিবেক তৈরি করেন। তাই শিক্ষকরা সমাজে আলাদা এক মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত; কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষকরা পদে পদেই লাঞ্ছিত-অপমানিত হোন। একদিকে তাদের আয় অত্যন্ত সীমিত অন্যদিকে বেতন বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নামলেও তাদের রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী পিটিয়ে সরিয়ে দেয়।

আজ রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া দেয়াসহ তিন দফা দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা; কিন্তু খবরে জানা যায়, দুপুর নাগাদ শিক্ষক-কর্মচারীদের অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। রাস্তা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের সরাতে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে পানি ছুড়েছে। এতে কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমের নেতৃত্বে একটি দল আন্দোলনকারী শিক্ষকদের রাস্তা ছেড়ে দিতে আলটিমেটাম দেয়। ডিসি মাসুদ আলম শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা শহীদ মিনারে চলে যান; পাঁচ মিনিট সময় দেয়া হলো। পাঁচ মিনিট পর আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আপনাদের নেতারা শহীদ মিনারে চলে গেছেন। সুতরাং আপনারা এখানে রাস্তা অবরোধ করবেন না।’

আন্দোলনরত শিক্ষকরা সরতে রাজি হননি। শিক্ষকরা যে কোনো মূল্যে অবরোধ চালিয়ে যাবেন বলে জানান। শিক্ষকরা দাবি করেন, ‘আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়ব না।’ এর আগে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আগামী মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার দাবি তুলেছিল ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’।

প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষকরাই-বা সরকারকে কেন এভাবে হুমকি দেবেন, আর পুলিশই-বা কেন তাদের ওপর লাঠিপেটা করবেন? বিষয়টি কি কোনোভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত না? প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তাটি ঢাকা শহরের ব্যস্ততম সড়ক। এই সড়কটি অবরোধ করে রাখলে অর্ধেক শহরে জ্যাম পড়ে যায়, তাতে নাগরিকদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। শিক্ষকরা কেন জনগণকে এভাবে জিম্মি করে দাবি আদায় করতে গেলেন? আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই-বা কেন এভাবে থ্রেট দিলেন যে পাঁচ মিনিটের মধ্যে রাস্তা ছেড়ে দিতে হবে। শিক্ষকদের বুঝিয়ে-অনুরোধ করে বলা যেত যে, আপনারা শহীদ মিনার চলে যান, তার জন্য তাদের আরও সময় দেয়া যেত। হঠাৎ লাঠিপেটা ও জলকামান নিক্ষেপের কারণে বিষয়টি আরও জটিলতায় মোড় নিল। আবার শিক্ষকদের বলার পরও তারা কেন রাস্তা আটকে বসে রইলেন, তাও তো আমরা বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে ইচ্ছে করেই একটা সংঘর্ষ সৃষ্টির চেষ্টা উভয়পক্ষ থেকেই ছিল।

বাংলাদেশে কোনো সমস্যার সমাধান কেন আলাপ-আলোচনা করে হয় না- সেটা একটা রহস্য। শিক্ষকরাও যদি ছাত্রদের মতো আচরণ করেন এবং পুলিশই যদি তাদের ওপর সমানভাবে চড়াও হয়- তাহলে আমাদের আর কিছু বলার থাকে না। আমরা শুধু সরকারকে এতটুকুই বলতে চাই, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে সমস্যার সমাধান সম্ভব তাকে সংঘর্ষে পরিণত করবেন না। শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও জলকামান নিক্ষেপের ঘটনায় আমরা নিন্দা জানাই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ