কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনিয়ম দূর করুন
রাজধানী ঢাকা শহরের অনেক সরকারি অফিসে কী ধরনের অনিয়ম হয়, তা হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা। দুর্নীতির অভিযোগ অনেক সময় হয়তো সংবাদমাধ্যমে আসে, যার মাধ্যমে আমরা কিছু খবর পাই; কিন্তু এমন অনেক ধরনের অপরাধ আছে, যা দিনের পর দিন চলতে থাকে কিন্তু আমরা জানতে পারি না। যেমন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কথাই যদি বলি। এই অধিদপ্তরটির জন্যই ফার্মগেটের ওই জায়গাটি খামারবাড়ি হিসেবে পরিচিত। সারা দেশে আধুনিক কৃষি ও ফসল বিস্তারের দায়িত্ব পালন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আশ্চর্যজনক খবর হচ্ছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরে দীর্ঘদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সমিতি-সংগঠনের দৌরাত্ম্য চলছে।
এখানে কাজ করেন পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের মধ্যে রয়েছেন শতাধিক নারী। নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী অনেকের শিশুসন্তান রয়েছে। ডে-কেয়ার না থাকায় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে স্বজন বা ভাড়াটে আয়া কিংবা বাণিজ্যিক ডে-কেয়ারের ওপর নির্ভর করছেন। এতে সন্তানদের ঝুঁকি বাড়ছে। অফিসেও তারা মনোযোগ দিতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিসে থাকি। ছোট বাচ্চা বাড়িতে রেখে কাজ করা অত্যন্ত কষ্টকর। ডে-কেয়ার থাকলে সবাই স্বস্তিতে কাজ করতে পারতেন। রুম পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ দপ্তরের ভেতরে এত সংগঠন কার্যালয় খুলে বসেছে!’
আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ডে-কেয়ারের জায়গা নেই, অথচ দপ্তর ভরা সংগঠনের কার্যালয়ে। মোট আটটি সংগঠনের কার্যালয় পাওয়া গেছে, যারা একাধিক সরকারি কক্ষ দখল করে রেখেছে। অথচ কক্ষ সংকটের অজুহাত তুলে ডে-কেয়ার সেন্টার চালুর উদ্যোগ বারবার আটকে যাচ্ছে। আটটি সংগঠনের মধ্যে সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত যেমন আছে, তেমনি রয়েছে অনিবন্ধিতও। এসব সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কার্যালয়ে বসে তদবির বাণিজ্য করছেন। ফলে দপ্তরের মূল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া এসব কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ নানা বিল অধিদপ্তরকে বহন করতে হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অধিদপ্তরের ভেতরে একটি আধুনিক ডে-কেয়ার সেন্টার গড়ে তুলতে গত এক বছরে একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে দপ্তরে কর্মরত নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সন্তান দেখাশোনার ব্যবস্থা হবে; তারা কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে পারবেন; কিন্তু কক্ষ সংকটের অজুহাতে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়নি। ঢাকার বাইরের যেসব প্রকল্পের লিয়াজোঁ অফিসের জন্য খামারবাড়িতে একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংগঠনের নামে বরাদ্দ কক্ষ বাতিল করা হয়নি। ফলে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার খোলার জায়গাও মিলছে না।
এরকম অনিয়ম-দৌরাত্ম্য বোধহয় বাংলাদেশেই সম্ভব। বিদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেখানে এখন ডে-কেয়ারের সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে, বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন খবর খুবই দুঃখজনক। ডে-কেয়ারের চেয়ে কোনোভাবেই কোনো সংগঠনের কার্যালয় বড় হতে পারে না। সরকারি অফিসে এরকম দলীয় সংগঠনের কার্যক্রম কীভাবে চলছে তাও তদন্ত করে বের করতে হবে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব এই অনিয়ম দূর হোক। সংগঠনের কার্যালয় উচ্ছেদ করে ডে-কেয়ার সেন্টার খোলা হোক। এ ব্যাপারে প্রশাসন দ্রুত সচেতন ভূমিকা পালন করুক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে