নির্বাচনের আগেই লুট হওয়া সব অস্ত্র উদ্ধার করুন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানা-ফাঁড়িতে উচ্ছৃঙ্খল জনতা ও সহিংসকারীদের আক্রমণের ফলে পুলিশের যেসব অস্ত্র, গোলাবারুদ লুট হয়, তার সব এখনো উদ্ধার করা যায়নি। অনেক অস্ত্র রয়ে গেছে হামলাকারীদের হাতে। গত এক বছর ধরেই এ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, এসব অস্ত্র ব্যবহার করে খুনাখুনি, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করছে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে অপরাধ বিশ্লেষকরা এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন, দেশে অপরাধ বৃদ্ধির বড় কারণ অবৈধ এসব অস্ত্রের ব্যবহার। বিশেষ করে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবারে অবৈধ অস্ত্র বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম শহরে এসব অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত ৬ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদন জানা যায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামে থানা ও ফাঁড়িগুলোতে নজিরবিহীনভাবে হামলা চালানো হয়। অস্ত্রাগার ভেঙে নিয়ে যাওয়া হয় হয় অস্ত্র। পরে এসব অস্ত্র মিলেছে বিভিন্ন অপরাধীর কাছ থেকে। তারা পুলিশের এসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে ডাকাতি-ছিনতাইয়ে। এর মধ্যে রয়েছে চায়নিজ রাইফেল, এসএমজি, বিভিন্ন মডেলের পিস্তল, শটগান ও গ্যাসগান। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ১৫৬টি হদিস এক বছরেও মেলেনি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব অস্ত্র উদ্ধার না হলে অপরাধ বেড়ে যাবে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দেশের ৬৬৪টির মধ্যে ৪৬০ থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়। ১১৪টি ফাঁড়িতেও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত লুট হওয়া চার হাজার ৩৮৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি এক হাজার ৩৬৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে, এক বছরেও কেন লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হলো না? এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছিনতাই-ডাকাতি বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানান, লুট হওয়া অস্ত্রের বড় অংশ এখন সন্ত্রাসী, ডাকাত, ছিনতাইকারী, মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চলে গেছে। লুটের এসব অস্ত্র কেউ কেউ নিজের কাছে রেখেছে, আবার কেউ বিক্রি করে দিয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে গত সেপ্টেম্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরেশোরে নেমেছিল। পরে তার গতি কমে যায়।
পুলিশ বলছে, লুট হওয়া অস্ত্র দিয়ে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে গোলাগুলি করে একাধিক হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উদ্ধার করা হয় ময়মনসিংহের কোতোয়ালির মো. মোতালেবের মেয়ে শাহিদা ইসলামের গুলিবিদ্ধ লাশ। তিনি পুরান ঢাকার ওয়ারীতে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। এ ঘটনায় তার প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জানা যায়, শাহিদাকে যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সেটি ছিল পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র।
গত ২৮ মে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানা এলাকা থেকে মো. পারভেজ ও রিয়াজুর রহমান নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় দুজনের কাছ থেকে ধারালো দেশি অস্ত্রসহ একটি রিভলবার ও গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, এসব রিভলবার ও গুলি গত বছরের ৫ আগস্ট পাহাড়তলী থানা থেকে লুট করে দুর্বৃত্তরা। গত ১৮ জুন ও ২৬ জুনেও চট্টগ্রাম নগরের কয়েকজন অপরাধীদের কাছ থেকে পুলিশ পুলিশের লুট হয়ে যাওয়া উদ্ধার করেছেন। আরও অনেক অস্ত্র অপরাধীদের হাতে রয়ে যাওয়ায় পুলিশও এ নিয়ে খুব চিন্তিত।
যৌথ বাহিনীর তৎপরতা বাড়ালে অপরাধীরা সাময়িক সময়ের জন্য গা-ঢাকা দেয়, পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটু অবহেলা দেখলেই তারা আবার বেরিয়ে আসে সদর্পে। আমরা চাই পুলিশের সব অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত থাকুক। যেভাবেই হোক পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। তা নাহলে শুধু জনগণের জানমালই যে অনিরাপদ থাকবে তা না, নানা ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতাও তৈরি হবে। সামনে নির্বাচন। নির্বাচনের সময় এসব অস্ত্রের ব্যবহার বাড়বে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। তাই নির্বাচনের আগেই লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে তৎপর হোন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে