ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে ইউরোপীয় নেতাদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান পুতিনের
ইউক্রেনে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় নেতাদের যৌথ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং পোল্যান্ডের নেতৃত্বে দেয়া সোমবার (১২ মে) থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি মেনে চলতে ব্যর্থ হলে রাশিয়াকে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বাড়ানোর বিষয়েও সতর্ক করা হয়।
এর জবাবে চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনের সাথে ফের সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন পুতিন। কিন্তু এর মধ্যে সামরিক অভিযান বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেননি তিনি।
দ্য গার্ডিয়ান এবং রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, শনিবার (১০ মে) গভীর রাতে ক্রেমলিনে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুতিন বলেন, ‘কোনো শর্ত ছাড়াই আমরা বৃহস্পতিবার (১৫ মে) কিয়েভকে ফের আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা আশাবাদী, এই আলোচনায় নতুন যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হতে পারব’।
২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম দিকে ইস্তাম্বুলে সরাসরি আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। পুতিন বলেন, ‘২০২২ সালের ওই সংলাপে যেসব আলোচনা অমীমাংসিত রয়ে গেছে তা ফের শুরুতে কিয়েভ সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি’।
সংলাপটি আয়োজনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সহায়তা চাইবেন বলেও জানান রুশ প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন ‘আমি ইউক্রেনের সঙ্গে আন্তরিক আলোচনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের মূল কারণ চিহ্নিত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি স্থাপন করতে চাই’।
কারণগুলোসহ পুতিনের শর্তের মধ্যে রয়েছে, ইউক্রেনকে ‘ডি-নাজিফাই’ করা, রুশভাষীদের নিরাপত্তা, ন্যাটোর সম্প্রসারণ রোধ ও ইউক্রেনের পশ্চিমমুখী নীতির বিরোধিতা।
তবে, কিয়েভ ও পশ্চিমারা বরাবরই এসব দাবিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এটিকে রাশিয়ার ‘সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের প্রচেষ্টা’ বলেও আখ্যা দিয়েছে।
পুতিন বলেন, তিনি আলোচনায় রাজি। সম্ভব হলে পরেও যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেতে পারে। তবে তিনি ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ইউরোপীয় নেতাদের বিরুদ্ধে রাশিয়া বিরোধী মনোভাব ও আল্টিমেটাম দেয়ার অভিযোগও তোলেন তিনি।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ এবং পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের কিয়েভ সফরে গিয়ে সমন্বিত যুদ্ধবিরতির আবেদনটি জানান।
তারা একযোগে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সেই প্রস্তাবে সাড়া না দিলে রাশিয়াকে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেন।
ইউক্রেনের পক্ষে থাকা ২০টি দেশের নেতাদের সঙ্গে কিয়েভে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকও করেন ইউরোপীয় চার নেতা। মিত্রদের সমর্থন প্রদর্শনে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
পরে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কোনো শর্ত ছাড়াই আগামী সোমবার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। রাশিয়া এতে সাড়া না দিলে ইউরোপ ও আমেরিকা একসঙ্গে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেবে’।
স্টারমার বলেন, ‘আমরা পুতিনকে ডাকছি। যদি তিনি শান্তির ব্যাপারে সিরিয়াস হন, তাহলে এখনই তার কাছে তা প্রমাণ করার সুযোগ আছে’।
পুতিনের শর্ত প্রত্যাখ্যান করে তিনিও বলেন, ‘এটি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান। এর চেয়ে কম কিছু হলে রাশিয়ার জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বাড়বে’।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে